চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ফল নিয়ে ঝামেলা মিটছে না। জায়েদ খান ও নিপুণ আক্তার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদটি আপাতত শূন্য রয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার আদালত ওই পদে স্থিতাবস্থা জারি করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছন। আগামীকাল রোববার বিষয়টি শুনানির জন্য রয়েছে। সেখানেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে।
ফলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসীন হচ্ছেন এ নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন সুপ্রিমকোর্টের দিকে। এদিকে শিল্পী সমিতি থেকে পদত্যাগ করেছেন কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচিত চিত্রনায়িকা রোজিনা।
২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। নিপুণ আক্তার পান ১৬৩ ভোট। এরপর টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ একাধিক অভিযোগ আনেন নিপুণ।
পরে নির্বাচনি আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করেন তিনি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে করণীয় জানতে আবেদন করেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান।
সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে আপিল বোর্ডকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনার দায়ে বিজয়ী প্রার্থী জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করেন। একই সঙ্গে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন জায়েদ খান। ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন নিপুণ। ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থা জারি করেন চেম্বার আদালত।
আদালতে নিপুণের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। অন্যদিকে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, আহসানুল করিম, নাহিদ সুলতানা ও মজিবুল হক ভূঁইয়া।
জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন চেম্বার বিচারপতি। ফলে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেউই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
নিপুণের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হওয়ায় নিপুণ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। কেননা এতে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত বহাল রইল। ইতোমধ্যে নিপুণ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শপথও নিয়েছেন।
এ বিষয়ে নিপুণ আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, আগেও বলেছি আমি ন্যায়বিচার চাই। হাইকোর্ট একটা রুল জারি করেছিলেন, সেটা আসলে মেইনটেইনঅ্যাবল না-যা পরে ফুলবেঞ্চে শুনানি হবে। আর আপিল নিয়ে যে রায়টা ছিল, তা বাতিল হয়ে গেছে।
জায়েদকে উদ্দেশ করে নিপুণ বলেন, ‘আইন-আদালত এসবে আমি একদমই অভ্যস্ত নই। সে হিসেবে আমি তাকে এটাই বলব যে, আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি। হাতে হাত মিলিয়ে চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করি।’
আইনজ্ঞরা জানান, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে তাকে। তবে রায়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে রায় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
এদিকে ১০ ফেব্রুয়ারি দিনভর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, নিপুণ শিল্পী সমিতিতে গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শুভেচ্ছা নিয়েছেন এবং তার প্যানেলের বিজয়ী সদস্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে চিত্রপাড়ায়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে।
এ প্রসঙ্গে জায়েদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাহামান্য আদালত একটা বিষয় নিয়ে আদেশ দিয়েছেন, কিন্তু তারা সেটা মানছেন না। বুঝলাম না তারা কি আদালতের আদেশ বোঝেন না আমি আর এই বিষয়ে কথা বলব না, মহামান্য আদালত যা বলার বলবেন।’
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিপুণ বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আদালত অবমাননা করে ক্ষমতায় বসার কোনো কারণ নেই। ১০ ফেব্রুয়ারি আমি কোনো দায়িত্ব পালন করিনি। সমিতির একজন সদস্য হিসেবে সারাদিন ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছি। কমিটির কেউ হিসেবে নয়।’
সমিতির অফিসে নেমপ্লেট বানানোর বিষয়ে নিপুণ বলেন, আমি যেদিন শপথ নিই সেদিনই আমার নেমপ্লেট তৈরি করা হয়েছিল।’
রোজিনার পদত্যাগ : চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে পদত্যাগ করছেন মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচিত চিত্রনায়িকা রোজিনা।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার পদত্যাগপত্র জমা দিতে শিল্পী সমিতিতে গেলে কাউকে না পেয়ে পরে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনকে ইমেইলে পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়েছেন।
সেখানে ব্যক্তিগত কারণের কথা বলেছেন তিনি। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন. রোজিনার কোনো পদত্যাগপত্র আমি পাইনি।
উল্লেখ্য, এর আগে শিল্পী সমিতির শপথের আয়োজনেও অংশ নেননি রোজিনা।