এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে কাতারের গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে ইউক্রেন সংকটের কারণে যে কোনো সময় ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে রাশিয়া। মস্কোর সেই হুমকি থেকে ইউরোপের সুরক্ষায় কাতার গ্যাস সরবরাহ করলে ভাটা পড়তে পারে এশিয়ার সঙ্গে গ্যাস বাণিজ্য সম্পর্কে। গ্যাস নিয়ে বৈশ্বিক তৎপরতাও জটিল আকার ধারণ করছে ইউক্রেন সংকটের কারণে।
গ্যাসের জন্য রাশিয়ার বিকল্প খুঁজতে মরিয়া ইউরোপের দেশগুলো। একই সঙ্গে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রধান গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে বাইডেন প্রশাসন কথা বলছে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর জন্য। বিশেষ করে কাতার থেকে গ্যাস ইউরোপে রপ্তানি করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাণিজ্য ও পণ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটা কঠিন, কারণ কাতার একতরফাভাবে ইউরোপে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বাড়াতে পারে না, কারণ দেশটির বেশিরভাগ উৎপাদন এশিয়ার দেশসমূহের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গ্যাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণী গ্রুপ কেপলারের শীর্ষ এলএনজি বিশ্লেষক লরা পেজ বলেন, কাতার বিশ্বব্যাপী এলএনজির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করে। তবে পারস্য উপসাগরীয় দেশটি ইতোমধ্যেই উৎপাদনে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করেছে।
পেজ জানান, কাতারের বৃহত্তম গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ এবং রপ্তানিকারক কোম্পানি রাস লাফান প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ গ্যাস সরবরাহে এশিয়ার ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, এশিয়া এই মুহূর্তে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। ফলে কাতারের গ্যাস সরবরাহের একটি বড় অংশ এখন ইউরোপের দিকে ফেরানোর সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।
পরামর্শক সংস্থা এফজিই-র মধ্যপ্রাচ্যের গ্যাস পরিচালনা টিমের প্রধান সিয়ামক আদিবি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, কাতার সত্যিই ইউরোপের জ্বালানি সংকট সমাধান করতে পারে না।
রাশিয়া যে কোনো সময় ইউক্রেনের ওপর হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।
গ্যাস সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিও মস্কো প্রত্যাখ্যান করেছে। এটিকে ‘ফেক হিস্টিরিয়া’ বলছে রাশিয়া।
বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনার পেছনে আরও একটি বড় কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি কাতারে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত ফোরামের দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাশিয়া এই ফোরামের সদস্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়।
সম্প্রতি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিতে ধরা পড়ে যে, ইউরোপের সমুদ্রপথে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) কনটেইনার ভর্তি জাহাজের ভিড় বেড়ে গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ।
বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাসের ১৭ শতাংশ উৎপাদন করে রাশিয়া। আর এই গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ইউরোপীয় দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য বলছে, ১৯৭০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ইউরোপ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি শুরু করে। সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে সেই নির্ভরতা আরও বেড়েছে। বছরে এখন ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরোপে সরবরাহ করে রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে প্রায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। ফলে অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় ছয় বা সাতগুণ বেড়েছে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া