বিপিএল : টানা সপ্তম জয়ে সবার আগে ফাইনালে সাকিবের বরিশাল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পুঁজি মাত্র ১৪৩ রানের। কোয়ালিফায়ারের মতো বড় ম্যাচে এতো অল্প রান নিয়ে জয়ের আশা করা বেশ কঠিনই বটে। কিন্তু ফরচুন বরিশালের জন্য যেনো কঠিন কিছুই নেই। উড়তে থাকা দলটি দুর্দান্ত বোলিংয়ে আরও একবার অল্প পুঁজি নিয়েই কুমিল্লাকে ১৩৩ রানে থামিয়ে জিতে গেলো গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিফায়ার ম্যাচ।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ১০ রানে হারিয়ে টানা সপ্তম জয়ে সবার আগে এবারের বিপিএলের ফাইনালে উঠে গেলো সাকিব আল হাসানের বরিশাল। তবে বাদ পড়েনি কুমিল্লা। বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুখোমুখি হবে ইমরুল কায়েসের দল। সেই ম্যাচের জয়ী দল খেলবে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে।

universel cardiac hospital

বরিশালকে ফাইনালে তোলার মূল কারিগর দুই বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা ও শফিকুল ইসলাম। এ দুজনের অসাধারণ বোলিংয়ে আটকা পড়েছে কুমিল্লা। ডেথে বোলিং করতে এসে নিজের শেষ দুই ওভারে মাত্র ৭ রান খরচ করেন মেহেদি রানা। শফিকুলের ৪ ওভারে খরচ হয় মাত্র ১৬ রান, নেন ২টি উইকেট।

১৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ ইতিবাচকই ছিল কুমিল্লার দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও লিটন দাসের। মুজিব উর রহমানের করা প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। পরে সাকিবের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেও একই ঠিকানা বেছে নেন তিনি। সেই ওভারের শেষ বলে দৃষ্টিনন্দন শটে ইনিংসের প্রথম ছক্কা হাঁকান মাহমুদুল জয়।

প্রথম তিন ওভারে আসে ২২ রান। এরপরই লিটন-জয়কে খোলসে আবদ্ধ করে ফেলেন বরিশালের বোলাররা। পরের তিন ওভার আসে মাত্র ১৬ রান। ফলে কুমিল্লার পাওয়ার প্লে শেষ হয় বিনা উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে। তিন ওভারের বাউন্ডারি খরার সমাপ্তি ঘটে সপ্তম ওভারে মুজিবের বলে লিটনের চারের মারে। সেই ওভারের শেষ বলেও বাউন্ডারি হাঁকান লিটন।

তবে অপরপ্রান্তে বেশিই ধীর খেলতে থাকেন মাহমুদুল জয়। সাকিবের বলে দারুণ ছয় দিয়ে শুরু করলেও পরে যেন রান তোলাই ভুলে যান এ তরুণ ব্যাটার। যে কারণে বাড়তে থাকে রানের চাপ। দশ ওভার শেষে কুমিল্লার সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫৯ রান। এর মাঝে চতুর্থ ওভারে শফিকুলের বলে লিটনের ক্যাচও ছাড়েন মুনিম শাহরিয়ার।

ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা। গুড লেন্থের স্লোয়ার ডেলিভারিতে বড় শট খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান জয়। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে মাত্র ২০ রান। যেখানে ডটই ছিল ১৫টি।

প্রথম উইকেট পতনের পর ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বরিশাল। ১২তম ওভারে নিজের স্পেল শেষ করতে এসে দুই উইকেট তুলে নেন আরেক বাঁহাতি পেসার শফিকুল। ওভারের তৃতীয় বলে শর্ট থার্ডম্যানে ক্রিস গেইলের হাতে ক্যাচ দেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস (৫), এক বল পরে ইনসাইড এজে বোল্ড হন ৩৫ বলে ৩৮ রান করা লিটন।

চোখের পলকে তিন উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা। তবে চতুর্থ উইকেটে দ্রুত রান তোলেন ফাফ ডু প্লেসি ও মইন আলি। শেষ ৬ ওভারে যখন ৬০ রান প্রয়োজন, তখন ইনিংসের ১৫তম ওভারে নাজমুল শান্তকে দিয়ে বাজি খেলেন সাকিব। তবে সেই ওভারে একটি করে চার-ছয় মেরে ১৪ রান নিয়ে নেন ডু প্লেসি। সমীকরণ নেমে আসে ৩০ বলে ৪৬ রানে।

ডোয়াইন ব্রাভোর করার পরের ওভারের প্রথম বলেই বিশাল এক ছক্কা হাঁকান মইন। তবে পরের বলেই প্রতিশোধ নিয়ে নেন ব্রাভো। ভুল লাইনে খেলে সরাসরি বোল্ড হন ১৫ বলে ২২ রান করা মইন। এরপর দারুণ ডেথ বোলিংয়ের নৈপুণ্য দেখান মেহেদি রানা। তার করা ১৭ ওভারে ৩ এবং ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান নিতে সক্ষম হয় কুমিল্লা।

মেহেদি রানার করা ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিড উইকেটে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন ১৫ বলে ২১ রান করা ডু প্লেসি। এই উইকেটের সঙ্গেই যেনো নিশ্চিত হয়ে যায় বরিশালের জয়। সেই ওভার থেকে মাত্র ৪ রান খরচ করে শেষ ওভারের জন্য ১৮ ওভার রেখে যান বাঁহাতি পেসার রানা।

শেষ ওভারে ১৮ রান ঠেকানোর জন্য মুজিবের হাতে বল তুলে দেন সাকিব। ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে খানিক উত্তেজনা এনেছিলেন সুনিল নারিন। কিন্তু পরের তিন বলে আর আসেনি কোনো রান। উল্টো সেই ওভারের প্রথম বলে মাহিদুল অঙ্কন এবং পঞ্চম বলে নারিনকে আউট করে দলকে ১০ রানের জয় এনে দেন মুজিব।

বরিশালের পক্ষে ৩ ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন মেহেদি হাসান রানা। আরেক বাঁহাতি পেসার শফিকুল ৪ ওভারে ১৬ রানে নেন ২ উইকেট।

এর আগে প্রতিপক্ষের আমন্ত্রণে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই লং অন দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান ফর্মে থাকা মুনিম শাহরিয়ার। এক বল পর কাউ কর্নার দিয়ে আবারও ৬ রান নেন ডানহাতি তরুণ। তিনি শেষ বলে বাউন্ডারি মারলে প্রথম ওভারেই আসে ১৬ রান।

মোস্তাফিজুর রহমানের করা দ্বিতীয় ওভারে দৃষ্টিনন্দন এক পুলে আবারও ছক্কা হাঁকান মুনিম।তৃতীয় ওভার করতে এসে রান কিছুটা চাপান সুনিল নারিন, খরচ করেন মাত্র ৫ রান। তবে তানভির ইসলামের করার পরের ওভারে চারটি চার মারেন ক্রিস গেইল। কিন্তু মইন আলি ও নারিনের করা পাওয়ার প্লে’র শেষ দুই ওভারে আসে মাত্র ১২ রান।

প্রথম ৬ ওভার শেষে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫৭ রান। পাওয়ার প্লে শেষে আক্রমণে এসেই দ্বিতীয় বলে ইউনিভার্স বসকে ফেরান শহিদুল ইসলাম। আউট হওয়ার আগে ১৯ বল থেকে ২২ রান করেন গেইল। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুনিম শাহরিয়ার মিলে যোগ করেন ২৬ রান।

ইনিংসের দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে তানভির ইসলামের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন মুনিম। তার ব্যাট থেকে আসে ২ চার ও ৪ ছয়ের মারে ৩০ বলে ৪৪ রান। মুনিমের বিদায়ের পরই মূলত মোড়ক লাগে বরিশালের ইনিংসে। তিনি আউট হওয়ার পরের ১০.৪ ওভারে মাত্র ৫৯ রান করতে পেরেছে বরিশাল।

দারুণ ফর্মে থাকা সাকিব আউট হয়েছেন রান আউটে কাঁটা পড়ে। সুনিল নারিনের বলে স্ট্রেইট পুশ করেছিলেন সাকিব। বলটি নারিনের হাতে লেগে যেতে থাকে মিড উইকেটের দিকে। নন স্ট্রাইকে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন শান্ত। কিন্তু কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা দৌড় দেন সাকিব। স্ট্রাইকপ্রান্তে স্ট্যাম্প ভেঙে তার বিদায়ঘণ্টা বাজান ইমরুল কায়েস।

এরপর শান্ত নিজেও কিছু করতে পারেনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ১৩ রান। এক ছক্কায় আশা দেখিয়ে জিয়াউর রহমান আউট হন ১২ বলে ১৭ রান করে। চ্যাম্পিয়নখ্যাত ডোয়াইন ব্রাভো ১৭ রান করতে খেলেন ২১ বল, নুরুল হাসান সোহানের ১১ রান আসে ১৩ বল থেকে। ফলে বেশি বড় হয়নি বরিশালের সংগ্রহ।

কুমিল্লার পক্ষে শহিদুল ইসলাম নিয়েছেন ৩ উইকেট, মইন আলির শিকার ২টি। এছাড়া নারিন ও তানভিরের শিকার ১টি করে উইকেট।

শেয়ার করুন