ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করে বিএনপি। ‘সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার নীলনকশার অংশ হিসেবে পুনরায় নির্বাচন কমিশন গঠনের তৎপরতা শুরু করেছে’-বলেও অভিযোগ তুলছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
আজ বুধবার বেলা তিনটায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি এই অভিযোগ করে।
দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ও সিদ্ধান্তের কথা জানাতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখিত বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটির নিকট নাম প্রেরণ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয় যে, বিএনপি মনে করে বর্তমান জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন অবৈধ আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিএনপি মনে করে অনুসন্ধান কমিটিতে নাম পাঠানো ও নির্বাচন কমিশন গঠন একেবারই অর্থহীন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার নীলনকশার অংশ হিসেবে পুনরায় নির্বাচন কমিশন গঠনের তৎপরতা শুরু হয়েছে।
ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও নিরপেক্ষ সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় গ্রহণযোগ্য, অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সংকট উত্তরনের একমাত্র পথ।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর ফোনালাপ তদন্ত দাবি
বিএনপির বৈঠকে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ফোনলাপ ফাঁস হওয়ার বিষয়ে তদন্তের দাবি করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, বৈঠক মনে করে ফোনালাপটিকে ‘নির্দোষ ফোনলাপ’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু আইনমন্ত্রী ফোনালাপটির সত্যতা স্বীকার করেছেন তাই এই আলাপের বিষয় অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে আলোচিত বিষয় সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত করা দরকার।
অবিলম্বে এই ফোনলাপ ফাঁস হওয়া বিষয়ে শুধু তদন্ত নয় ফোনলাপের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বিএনপি। ফখরুল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে এর নিরপেক্ষ তদন্ত করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়াও সভায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সিন্ডিকেট অপতৎপরতার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদ জানানো হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচনের সাফল্য ও বর্তমান অবস্থায় তা পুনরায় জনগণের সামনে তুলে করতে কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া পিলখানায় ট্রাজেডির স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারি আলোচনা সভা ও বনানী কবরস্থান জিয়ারতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলেও জানান ফখরুল।
নিত্যপণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান
ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্রমবর্ধমান নিত্যপণ্য ও গ্যাস-পানির মূল্য ধাপে ধাপে বৃদ্ধিতে মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, অনির্বাচিত সরকারের দুর্নীতি, অপব্যয় ও অপরিকল্পিত ভ্রান্ত নীতির কারণে অস্বাভাবিকহারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে খাতে কুইক রেন্টাল প্রজেক্টে জবাবদিহি ছাড়া বিনিয়োগ, ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠানটির এমডির তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে পানির মূল্য বাড়ানো হচ্ছে।
বর্তমান অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মনে করে বিএনপি।
সভায় অবিলম্বে পানি, গ্যাস, তেলের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি করা হয়। একইসঙ্গে নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।