‘ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের’ অপেক্ষায় বিএনপিসহ মিত্ররা

হাসান শান্তনু

বিএনপি
ফাইল ছবি

বিএনপিসহ দলটির নেতৃত্বের জোটভুক্ত দলগুলো ‘ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের’ অপেক্ষায় আছে। দলগুলোর বিশ্বাস, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে’ অনেক কিছু পাল্টে যেতে পারে। তখন দলগুলোর দাবি মেনে নেবে সরকার, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে’ আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনে বাধ্য হবে। দলগুলোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, নাকি দেশি-বিদেশি চাপে ওই ‘ভিন্ন প্রেক্ষাপটের’ সৃষ্টি হবে, এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষনেতার। মত ও পথের সঙ্গে আলাপের সময় এমন চিন্তাভাবনার কথা ব্যক্ত করেন তারা।

পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের ব্যাপারে প্রকাশ্যে দলগুলো ‘নির্লিপ্ত’ থাকলেও ইসি গঠনের বিষয়ে খেয়াল রাখছে। অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) কার্যক্রম, কোন কোন দলের প্রস্তাবিত নাম পরবর্তী ইসিতে প্রাধান্য পাচ্ছে- এসব দিকে গভীর পর্যবেক্ষণ করছে দলগুলো। যদিও দলগুলো ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ বর্জন করেছে। চিঠি পেয়েও অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেনি। রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়া দুই-তিনটি দলও আছে ‘ভিন্ন পরিস্থিতির’ অপেক্ষায়। রাজনীতির দলগুলোর মাঠে ভূমিকা এখন কী হবে, তা নির্ধারণ করতে পারেনি তারা।

universel cardiac hospital

দলগুলো বলছে, ইসি নয়, তাদের লক্ষ্য ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা’। এর মধ্যে ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটিকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যা দেয় বিএনপি। এ কমিটির অনুসন্ধানে গঠন হতে যাওয়া ইসিকেও আগাম ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছে দলটি। বিএনপির দাবি, সরকারের পছন্দমতো ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি গঠন হবে। তবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপি ‘নির্দলীয় সরকারের’ অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় করতে পারবে কী না, বা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ তৈরি করা যাবে কী না, এ বিষয়ে দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা এখনো সন্দিহান।

কারণ, সরকারের সঙ্গেও প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্কে দৃশ্যমান টানাপোড়েন নেই। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘অস্থিতিশীল, অরাজক পরিস্থিতির’ সৃষ্টি করতে চাইলে সরকারও তখন পদক্ষেপ নেবে। বিএনপিসহ দলটির মিত্রদের মাঠে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে সরকার বরাবরই কঠোর অবস্থানে বলে অভিযোগ আছে। সাংগঠনিকভাবেও সারাদেশে বিএনপি অগোছালো। অনেকে মনে করেন, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের’ (র‌্যাব) কয়েক কর্মকর্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে চলমান কিছু সমালোচনাও আছে।

২০২৩ সাল সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বছর। এসব বিবেচনায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ দৃষ্টি থাকছে বাংলাদেশের ওপর। দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি তাই প্রভাবশালী দেশের আতশি কাচের নিচে থাকতে পারে বছরজুড়ে। বিষয়গুলোকে বিএনপিসহ জোটভুক্ত ও সমমনা দলগুলো কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দাবি, ‘সরকার বিদায়ের ক্ষণ গণনা চলছে।’

বিএনপির নেতৃত্বের ঐক্যফ্রন্টভুক্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব মত ও পথকে বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসি নয়। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনকালীন সরকারের মূল এজেন্ডাকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যমান সংকটের সমাধান করা যাবে না।’

১৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে নির্বাচনকালীন তিন বছর মেয়াদি সরকার ব্যবস্থার’ দাবি জানান ঐক্যফ্রন্টভুক্ত নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সেই সরকারের রূপরেখা কী হবে, তা স্পষ্টভাবে অনুষ্ঠানে বলনেনি। কিছু ‘করণীয়’ উল্লেখ করে তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘সংবিধানে গত তত্ত্বাবধারক সরকারের মেয়াদ ছিল তিন মাস, ক্ষমতায় থেকেছে দুইবছর। তখন যতো জঞ্জাল ছিল, তার চেয়ে অনেক এখন জঞ্জাল। সেগুলো দূর করতে বেশি সময় লাগতে পারে।’

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার’ দাবি জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগ ছেড়ে নিজে দল গঠন করার পর থেকে বিএনপির কাছাকাছি থাকা কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিগত দিনে কোনো দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’

তথ্যমতে, ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে বিএনপিসহ ১৫টি ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেনি। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই সরকারবিরোধি দল। কয়েকটি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ, অনুসন্ধান কমিটির ব্যাপারে ‘অনাগ্রহ’ দেখায় রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। কিছু দল রাষ্ট্রপতির সংলাপে গিয়েও নাম দেয়নি। ধর্মভিত্তিক চারটি দল কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করতে পারেনি ‘সময়ের অভাবে’, একটি দলের নাম না দেওয়ার বিষয়ে ‘নীতিগত’ অবস্থা ছিল।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, ‘ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে নাম না দিলেও বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে আসবে। কমিটিতে নাম না দিয়ে দলটি ভুল করেছে। বিএনপি নাম না দেওয়ায় কিছু যায় আসে না। তারা না দিলেও অনেকেই নাম দিয়েছে। এসব নাম থেকে যাচাইবাছাই করে একটি ভালো ইসি গঠন হবে।’

শেয়ার করুন