সরকারি প্রতিষ্ঠান খুলতে পারবে এমএফএস কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন
মোবাইল ব‌্যাংকিং। ফাইল ছবি

ব্যাংকের পাশাপাশি এখন থেকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার (এমএফএস) জন্য সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী কোম্পানি খুলতে পারবে। তবে আগের মতোই মূল প্রতিষ্ঠানের নূ্যনতম শেয়ার থাকতে হবে ৫১ শতাংশ। মঙ্গলবার জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) রেগুলেশন্স-২০২২ এ নতুন বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থেকে সাবসিডিয়ারি হিসেবে ‘নগদ’ এর এমএফএস সেবা দেওয়ার পথ তৈরি হলো।

এতদিন ২০১৮ সালের রেগুলেশন্স বা প্রবিধানমালার আলোকে এমএফএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এতদিন শুধু ব্যাংকের নেতৃত্বে এমএফএসের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলার সুযোগ ছিল, যা ‘ব্যাংক লেড মডেল’ হিসেবে বিবেচিত। নতুন রেগুলেশন্সে আগের মতোই এ ধরনের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নূ্যনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৪৫ কোটি টাকা। নেতৃত্বে থাকার সুযোগ না থাকলেও এ ধরনের সাবসিডিয়ারিতে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমআরএ অনুমোদিত ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। নতুন নীতিমালাও এসব প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

universel cardiac hospital

জানা গেছে, ‘নগদ’ চায় একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে তার সাবসিডিয়ারি হিসেবে এমএফএস সেবা দিতে। যদিও বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন সংশোধন না করে সাধারণভাবে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমএফএস সেবা দেওয়ার সুয়োগ নেই। কেননা, বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন লেনদেনে বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে নগদকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি হিসেবে সেবা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনও পরিবর্তন করতে হবে। অপরদিকে, নগদ ডাক বিভাগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে চাইলে সে ক্ষেত্রেও সরকারকে অন্তত ৫১ শতাংশ মালিকানা দিতে হবে। বর্তমানে নগদে ডাক বিভাগের কোনো মালিকানা নেই। তবে আয় ভাগাভাগির ভিত্তিতে ডাক বিভাগের নাম ব্যবহার করে নগদ।

নতুন প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, লেনদেনের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন মেনে চলতে হবে। আগের মতো সব ধরনের লেনদেন ছাড়াও ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিওর ঋণ এবং বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ মাধ্যম ব্যবহার করে ঋণ বিতরণও করা যাবে। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের লেনদেন করলেও আগের নীতিমালায় বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না।

২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালে নীতিমালার আগ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে সেবা দিত। বিশ্বের কিছু দেশের মতো ‘টেলকো লেড মডেল’ তথা মোবাইল অপারেটরদের নেতৃত্বে এ সেবার সুযোগ চেয়ে আসছে টেলিকম অপারেটরগুলো। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরই ‘ব্যাংক লেড’ মডেলের পক্ষে। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংকের এমএফএস সেবা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিকাশ, ‘উপায়’ এবং ‘ট্যাপ’ পরিচালিত হচ্ছে সাবসিডিয়ারি হিসেবে। বাকিরা ব্যাংকের নিজস্ব সেবা হিসেবে পরিচালনা করছে। নগদ বাদে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি। আর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ১১ কোটি ১৫ লাখের মতো। গত ডিসেম্বর মাসে এমএফএসে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন