ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইউনিয়নভুক্ত দেশের কূটনীতিকদের গাজীপুরের অভিজাত একটি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। দেশের পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে চলমান প্রক্রিয়া, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইইউর ‘পর্যবেক্ষণসহ’ আরো কয়েকটি কারণে এ আলোচনা চলছে। ‘উন্নয়নের অংশীদার ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর’ বৈঠকের বিষয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনেরও ‘কৌতূহল’ আছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এ ধরনের বৈঠকে ঢাকার সঙ্গে ইইউর দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। তাই এর কূটনৈতিক গুরুত্ব আছে। বৈঠকের কথা ইইউর পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণত জানানো হয়। এবার সেভাবে জানায়নি। জাতীয় মাত্র দুই-তিনটি পত্রিকায় সম্মেলনের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র মত ও পথকে জানায়, এবার প্রথম ঢাকার বাইরে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠক হয়। এর আলোচ্য বিষয় বাইরে জানানো হয় না। এতে ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে ইইউর সহযোগিতার চলমান কার্যক্রম, এগুলোর ভবিষ্যৎ গতিপথ আলোচনা হয়। ইসি গঠনে প্রথমবারের মতো আইন প্রণয়ন, আইনের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কমিটি গঠন, কমিটির কার্যক্রম, গঠন হতে যাওয়া ইসি, বিএনপিসহ দলটির মিত্রদের রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও অনুসন্ধান কমিটিকে ‘বর্জন’ আলোচনায় আসে।
আগামী দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে ‘প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে’ কিছু আলোচনা আছে। ২০১৭ সালে গঠিত ইসি নিয়ে তখন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত কথা বলেন। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠকে ইসির ‘পুনর্গঠন’ নিয়ে আলোচনার কথা তিনি বৈঠকের আগে সংবাদমাধ্যমকে জানান। গঠন হতে যাওয়া ইসি নিয়ে বিদেশি কোনো রাষ্টদূত এখনো প্রকাশ্যে কিছু না বললেও আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেছেন।
ইইউর বর্তমান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি গত নভেম্বর মাসে বলেন, ‘নানা কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিপুল আগ্রহ রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। আগামী নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি রাখছে ইইউ। নির্বাচনের এখনো দুই বছর বাকি থাকলেও আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব।’
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের’ (র্যাব) কয়েক কর্মকর্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু সমালোচনা আছে। ২০২৩ সাল সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য বছর। এসব বিবেচনায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ দৃষ্টি থাকছে বাংলাদেশের ওপর। অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ কূটনৈতিক আলোচনায় বৈশ্বিক পরিসরে আগের তুলনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
- আরও পড়ুন >> বরিশালকে কাঁদিয়ে শিরোপা জিতল কুমিল্লা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ইইউর দেশগুলোর সঙ্গে শিগগিরই সরকারের পূর্বনির্ধারিত রাজনৈতিক আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের গত এক যুগের বেশি সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের রূপান্তর ঘটেছে। এক দশক আগেও দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অনেকটা ‘দাতা-গ্রহিতার’। ভূ-রাজনীতি, নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার তেমন সুযোগ ছিল না তখন।
ইইউ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো জটিল ভূ-রাজনীতি নিয়ে আলাপ করছে। বাংলাদেশকে পাশে চাচ্ছে আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে। বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বাড়ছে। দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। তাই আলোচনার বিষয়বস্তুও বেড়েছে।
গাজীপুরের মতো এর আগেও ঢাকায় ইইউর এ ধরনের বৈঠক হয়। যা দেশগুলোর নিজস্ব বিষয়। ইইউভুক্ত দেশে নিযুক্ত এ দেশের কূটনীতিকরাও এমন বৈঠক করে থাকেন। গাজীপুরের বৈঠকে অংশ নেন ঢাকাস্থ ইইউসহ এর অর্ন্তভুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মিশনের পদস্থ কর্মকর্তা। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামরির কারণে গত দুই বছর তা ‘ভার্চুয়ালি’ হয়। যা আসলে ইইউভুক্ত দেশগুলোর বার্ষিক সম্মেলন।