ব্রিটেনের ‘গোল্ডেন ভিসা’ নামে পরিচিত বিতর্কিত টায়ার ওয়ানের আওতাধীন ‘ফরেন ইনভেস্টর্স ফাস্ট ট্র্যাক রেসিডেন্সি ভিসা’ বাতিল করে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এই ভিসার আওতায় ব্রিটেনে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে স্ব-পরিবারে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাওয়া যেত। ‘অবৈধ অর্থ ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে নতুন করে কঠোর ব্যবস্থা’ নিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বিবিসিকে বলেছেন, অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
গোল্ডেন ভিসা বাতিলের ঘোষণাটি এমন সময় এলো যখন ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বুধবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাতে জানিয়েছিল, ইউক্রেনে হামলার আশঙ্কা থাকায় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার চাপ রয়েছে মন্ত্রীদের ওপর। আগামী সপ্তাহে গোল্ডেন ভিসা বাতিলের ঘোষণা প্রত্যাশা করা হচ্ছিল।
২০০৮ সালে এই ভিসাটি চালু করা হয়েছিল। এর আওতায় ন্যূনতম দুই মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে পরিবারসহ দেশটিতে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ দেয় সরকার। মূলত, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর ধনীক শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতেই এ ভিসা চালু করা হয়েছিল। বিনিয়োগের অঙ্কের ভিত্তিতে স্থায়ী হওয়ার অনুমোদন দ্রুত পাওয়া যেত। দুই মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগে ৫ বছর, পাঁচ মিলিয়নে ৩ বছর এবং দশ মিলিয়ন বিনিয়োগে দুই বছরে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ ছিল।
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর অনুসারে জানা গেছে, গত এক দশকে রাশিয়াসহ বিভিন্ন এশীয় দেশের অনেক দুর্নীতিবাজ এ ভিসার সুবিধা নিয়ে ব্রিটেনে স্থায়ী হয়েছেন। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যায়। গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি এই গোল্ডেন ভিসায় বিনিয়োগ করে ব্রিটেনে পরিবার নিয়ে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন।
- আরও পড়ুন >> ‘ইউক্রেন নিয়ে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে’
টাকার বিনিময়ে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব প্রদানের এই প্রক্রিয়া নিয়ে খোদ অনেক ব্রিটিশ রাজনীতিকরাও সমালোচনা করেছেন। স্পটলাইট অন করাপশনের মুখমাত্র সুসান হাওলি বলেছেন, এ ভিসা ব্যবস্থা ছিল যুক্তরাজ্যের জন্য দুর্নীতি, অর্থপাচার, নিরাপত্তার প্রশ্নেও ঝুঁকির বাহক।
গত ১৪ বছরে কতজন বাংলাদেশি কোটিপতি এ সুবিধা নিয়েছেন, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি ব্রিটেনের ইউকে বর্ডার এজেন্সি বা পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যে। তবে এ ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশভিত্তিক তালিকার শীর্ষ দশে নেই বাংলাদেশ। ২০০৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে ব্রিটেনের একটি দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থা দেশভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, তালিকার সময়কালে চীনের ৪১০৬, রাশিয়ার ২৫২৬, হংকংয়ের ৬৯২, যুক্তরাষ্ট্রের ৬৮৫, পাকিস্তানের ২৮৩, ভারতের ২৫৪, কাজাখিস্তানের ২৭৪, সৌদি আরবের ২২৩, তুরস্কের ২২১ ও মিসরের ২০৬ জন নাগরিক ছিলেন।
গোল্ডেন ভিসা বাতিলের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে লন্ডনে বসবাসরত আইনজীবী ও রাজনীতিক বিপ্লব কুমার পোদ্দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটি একটি কূটনৈতিক সিদ্বান্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৮ সাল থেকে ২৫৮১ জন রুশ নাগরিককে এ ভিসা দিয়েছিল।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহারকারীদের প্রতি আমার জিরো টলারেন্স রয়েছে। নতুন অভিবাসন পরিকল্পনায় ব্যবস্থাটির প্রতি ব্রিটিশ মানুষের আস্থা নিশ্চিত করতে চাই। এছাড়া দুর্নীতিবাজ অভিজাতদের ঠেকানো, যারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং আমাদের শহরগুলো কালো টাকা ছড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই ভিসা বন্ধ হলো জালিয়াতি ও অবৈধ অর্থায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার পুনরায় সূচনা। আমরা জালিয়াতি ঠেকানোর পরিকল্পনা প্রকাশ করব। একই সঙ্গে আসন্ন অর্থনৈতিক অপরাধ বিল আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।