ভাষার বিকৃত উচ্চারণ রোধে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত

হাসান শান্তনু

দেশীয় বেতার ও দূরদর্শনে (টেলিভিশন) বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণ রোধে উচ্চ আদালত নির্দেশ দেন দশ বছর আগে। আদালতের নির্দেশের পর এক যুগ কেটে গেলেও বিকৃত উচ্চারণ রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। পুরোপুরি বাস্তবায়ন নেই আদালতের নির্দেশের। ফলে ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা হচ্ছে না। প্রমিত বাংলার পরিবর্তে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দির মিশ্রণে ‘খিচুড়ি ভাষার’ ব্যবহার চলছে।

জানা যায়, বেতার ও দূরদর্শনে বিকৃত উচ্চারণে উপস্থাপনার শুরু হয় আজ থেকে পনেরো-ষোলো বছর আগে। শুরুতে সেটা ‘নজর কাড়লেও’ বাংলা ভাষার মধ্যে ইংরেজির অযাচিত ব্যবহার ও বিকৃত উচ্চারণ নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়। বিকৃতি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহারের প্রতি অনেকের আগ্রহ কমছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্য। তরুণদের একাংশ বাংলার চেয়ে অকারণে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। এর জন্য বিদ্যমান পরিস্থিতি অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

universel cardiac hospital

তথ্যমতে, ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয় ‘ভাষাদূষণ নদীদূষণের মতোই বিধ্বংসী’ শিরোনামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ওই সময়ের মহাসচিব রকিব উদ্দিন আহমেদ এটি আদালতের নজরে আনেন। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে বেতার ও দূরদর্শনে বিকৃত উচ্চারণ, ভাষা ব্যঙ্গ ও দূষণ করে অনুষ্ঠান প্রচার না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ভাষার দূষণ, বিকৃত উচ্চারণ, সঠিক শব্দচয়ন, ভিন্ন ভাষার সুরে বাংলা উচ্চারণ ও ভাষার অবক্ষয় রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নির্ধারণ করতে বাংলা একাডেমির ওই সময়ে সভাপতি আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করতে বলা হয়। নির্দেশ অনুযায়ী কমিটি গঠিত হয়। কমিটি ওই বছরই প্রতিবেদন পাঠায়। কমিটির সুপারিশে বলা হয়, ‘হিন্দি চ্যানেলের ছড়াছড়ি বাংলা ভাষার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এটি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

স্বতঃপ্রণোদিতভাবে দেওয়া ওই আদেশে আদালত বলেন, ‘বাংলা ভাষার পবিত্রতা রক্ষা করতে সর্বতোভাবে চেষ্টা করতে হবে। এই ভাষার প্রতি আর কোনো আঘাত যেন না আসে, সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, আদেশের পর এক দশকের মধ্যে ভাষা চর্চা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে।

২০১৪ সালে সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলনে নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন এক আইনজীবী। এতে বলা হয়, ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইন পাস হলেও ২৬ বছরে আইনটি অনুসরণ করা হচ্ছে না। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদালত গাড়ির নম্বরপ্লেট, সব ধরনের সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লিখতে আদেশ দেন।

সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদ বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এর আলোকে ১৯৮৭ সালে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ প্রবর্তন করা হয়। এ আইন অনুযায়ী, ‘সরকারী অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হবে।’

শেয়ার করুন