উচ্চমহলের আলোচনায় সম্ভাব্য সিইসি, কমিশনাররা

হাসান শান্তনু

সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে জোরদার হচ্ছে আলোচনা। কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)? সাবেক কোনো সচিব, সরকারি কর্মকর্তা, বা আমলা? নাকি সাবেক প্রধান বিচারপতি, বা বিচারপতি? নির্ধারিত চারটি নির্বাচন কমিশনার পদে কারা থাকছেন? অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রস্তাবিত তিন শতাধিক নাম থেকে ছোট হয়ে তালিকা বিশজনের কোঠায় নেমেছে। এখন অপেক্ষা দশে নেমে আসার। সেই তালিকায় কারা থাকছেন? চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

রাজনৈতিক মহলে উচ্চারিত হচ্ছে বিভিন্ন জনের নাম। বিভিন্ন দলে সম্ভাব্য নাম নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। কয়েকটি দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতার মুখে মুখে ভেসে বেড়াচ্ছে সিইসি হিসেবে সম্ভাব্য একাধিক জনের নাম। ইসি নিয়ে কূটনৈতিক পাড়ায়ও চলছে নানামুখি আলোচনা। বিশিষ্ট নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আলোচনাও পরবর্তী ইসি প্রসঙ্গে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধি কয়েকটি দলের রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেওয়া, অনুসন্ধান কমিটির কাছে তাদের নাম প্রস্তাব না করার বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এখনো থামেনি।

universel cardiac hospital

পরবর্তী ইসি কেমন হবে, অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) আইন অনুযায়ী কতোটা স্বাধীনতা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতির কাছে দশজনের নাম সুপারিশ করবেন, সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা দায়িত্ব পাচ্ছেন কী না, ইসির প্রতি অনেকের হারানো আস্থা ফিরে আসবে কী না- সব মহলের আলোচনায় সেগুলো ঘুরেফিরে আসছে। পাড়ার চায়ের দোকানে, পরিচিতজনদের সঙ্গে আড্ডায়, গণপরিবহনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কথাবার্তার বিষয়বস্তুও একই। সব আলোচনা ছাপিয়ে নতুন সিইসি কে হচ্ছেন, সেটা মূখ্য হয়ে উঠছে প্রায় সময়।

পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তি থেকে আসা তিন শতাধিক নামে আমলাদের আধিক্য। সিইসি হিসেবে সাবেক সচিবদের নাম বেশি। এ পদে সাবেক কোনো জ্যেষ্ঠ সচিব নিয়োগ পেতে পারেন বলে জোরালো আলোচনা হচ্ছে। আছে সাবেক দুই প্রধান বিচারপতিসহ ১৫ বিচারপতির নাম। কমিশনার হিসেবে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন জেলা ও দায়রা জজ, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নির্বাচন কমিশনের সাবেক একজন কর্মকর্তার থাকার সম্ভাবনা আছে। নতুন ইসিতে বেসামরিক আমলাদের প্রাধান্য থাকতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গণফোরামের সভাপতি, আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন মত ও পথকে শনিবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আগে দরকার শক্তিশালী ইসি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন। এটা জনগণের দাবি। সরকার সেটা করেনি। আলোচনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তড়িঘড়ি করে প্রণীত আইনটি আসলে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য। এটাকে ইসি গঠনের আইন বলে প্রচারণা জাতির সঙ্গে তামাশা ও প্রহসন।’

‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের’ (সিপিডি) বিশেষ ফেলো, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে নতুন ইসির কাছে তাঁর প্রত্যাশার কথা। তিনি মত ও পথকে বলেন, ‘নতুন ইসিকে এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান দেখাতে হবে। যেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধবিরোধি, দুর্নীতিবাজ, বিলখেলাপি, ঋণখেলাপি, করখেলাপিরা কোনোভাবে অংশ নিতে না পারেন। আমরা দেখেছি, মধ্যরাতে ব্যাংকগুলোর সভা করে ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দিতে। এটা নৈতিকতাবিরোধি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করতে পারবে না সার্চ কমিটি। ইসি গঠনের এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে ভালো যুক্তি নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের গেরো এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খুলবে না।’

সার্চ কমিটির ওপর ‘তাঁর আস্থা নেই’ জানিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান মত ও পথকে বলেন, ‘সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ কমিটির প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন, এটা সত্য। কিন্তু আমার নিজের কোনো আস্থা নেই।’ কেন আস্থা নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মানুষ পাওয়া যাবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আশা করছি, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, বা কোনো দলের সুবিধাভোগী কেউ ইসিতে নিয়োগ পাবেন না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী কাউকে ইসিতে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে না কমিটি।’

সিইসি, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবের জন্য ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করেছে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বের সার্চ কমিটি। রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এখন ওই তালিকা আরো কেটেছেঁটে নামিয়ে আনতে হবে দশজনে। সেজন্য আরো ‘দুয়েকটি’ সভায় বসতে হবে বলে জানান কমিটির দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) সামসুল আরেফিন। দশজনের নামের তালিকা করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার জন্য কমিটির হাতে ২৪ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় আছে।

শেয়ার করুন