কতোজন ভাষাশহীদের কথা লিখেছিল বায়ান্নের পত্রিকাগুলো?

হাসান শান্তনু

১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে অনেকে নিহত হন। তালিকা না থাকায় তাদের মধ্যে সবাই ভাষাশহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি আন্দোলনে প্রাণ দেওয়ার সত্তর বছর পরও। কারো কারো নাম জানা গেলেও তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। তালিকা না থাকায় ওই সময় কতোজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তা আজ পর্যন্ত নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। ভাষাশহীদদের মধ্যে অনেকে বেঁচে না থাকায় সেসব তথ্য সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে উঠেছে।

ভাষাশহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন পাঁচজন। আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুস সালাম ও শফিউর রহমান। ২০০০ সালে তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ না থাকা, সৈনিক ও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে মায়ের ভাষার জন্য তাদের রক্ত দেওয়ার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ভাষার জন্য জীবন দেওয়া অনেকের নাম আজও জানা যাচ্ছে না।

১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম মুখপত্র ‘সৈনিকের’ প্রতিবেদনে লেখা হয় ‘৭ জন নিহত: ৩ শতাধিক আহত’। দৈনিক আজাদের ওই সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, ‘২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি গুলিতে ৯ ব্যক্তির মৃত্যু হয়, বহু লাশ গুম করে ফেলা হয়েছিল।’

১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘সীমান্ত’ পত্রিকার সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী রোগশয্যায় বসে ‘লেখা কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ শিরোনামের কবিতায় চল্লিশজন, বা আরো বেশি শহীদ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘ওরা চল্লিশজন কিংবা আরও বেশি, যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে রমনার রোদ্রদগ্ধ’।

১৯৫৩ সালের মার্চে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের প্রথম স্মারকগ্রন্থে ‘একুশের ঘটনাপুঞ্জী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন আছে। এতে উল্লেখ আছে, ‘সর্বদলীয় কর্মপরিষদের’ পক্ষ থেকে বলা হয় ‘সর্বমোট ৩৯ জন শহীদ হন।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘বৃহস্পতি ও শুক্রবার মোট ৯ জন নিহত’। এ পত্রিকার অন্য একটি সংবাদে ‘পুলিশের গুলিতে গতকল্য ও অদ্য এ যাবই ৬ জন নিহত হয়’ বলে উল্লেখ করা হয়।

ভাষাসৈনিক, গবেষক আহমদ রফিকের ‘একুশ থেকে একাত্তর’ বইয়ে নিহতদের মধ্যে আবদুল আউয়াল, কিশোর অহিউল্লাহ ও সিরাজুদ্দিনের নাম আছে। যারা এখনো অনালোচিত রয়ে গেছেন।

ভাষা আন্দোলনের সংগঠক অলি আহাদ গণমাধ্যমে একাধিক বার জানান, ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের (বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্ক) আশপাশে, নবাবপুর রোড ও বংশাল রোডে গুলিতে কতোজন মারা গেছেন, তার সঠিক সংখ্যা কারো নেই।

শেয়ার করুন