নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটি যে দশ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠাচ্ছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা না হলে জনমনে ‘সংশয় ও সন্দেহ’ থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি আয়োজিত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবসের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ভালো মানুষ দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হবে না, নির্বাচন কমিশনকে কাজ করার কর্তৃত্ব দিতে হবে। সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে কর্তৃত্ব দেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। বর্তমান বাস্তবতায় কশিনকে সরকারের ওপর নির্ভর করতে হয়। আবার দলীয় সরকার প্রশাসনকে ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে পারে। এতে নির্বাচন কমিশন অনেক সময় অসহায় ভূমিকা পালন করে। এটাই নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু নতুন আইনে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আমরা আবারও বলছি, নির্বাচন কমিশন আইন হচ্ছে নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস।
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ না হলে মানুষের মাঝে একটা সংশয় ও সন্দেহ থেকে যাবে। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাজে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ আছে প্রধানমন্ত্রীর। সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ হলে এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া নাম প্রকাশ না হলে প্রস্তাবিত নাম থাকবে না কি বাইরে থেকে নাম অন্তর্ভুক্ত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাবে। রাষ্ট্রপতি মাত্র দুটি কাজ ছাড়া বাকি সব কাজই প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের পরামর্শ অনুযায়ী করেন। তাই সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ করা উচিৎ।
জিএম কাদের বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। তাই নির্বাচন কমিশন এমন লোক দিয়ে গঠন করা উচিৎ, যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। গণতন্ত্র চর্চার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে গণতন্ত্র চর্চা শুরুই করা যায় না। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রবেশদ্বার।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করতে আইন করেছিলেন। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনে আন্তরিক নয়। পল্লীবন্ধু আইনের সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু ওই দুটি দলের আন্তরিকতার অভাবে সেটাও বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা মানুষের ভাষা বোঝে না। তাই দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, অমর একুশের ধারাবাহিকতায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। একুশের চেতনায় দেশ স্বাধীন হয়েছে। একুশ আমাদের সাহসী হতে শিক্ষা দেয়, একুশ মানে মাথা নত করা নয়। জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষ প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ।