র‌ক্তিমও সঙ্গী হ‌লেন ৫ ভাই‌য়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনসেটে রক্তিম শীল
কক্সবাজারের চকরিয়ার পিকআপ চাপায় নিহত পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধে মা মানু রানী সুশীল এবং নিহত পাঁচজনের স্ত্রী-সন্তানরা (ইনসেটে রক্তিম শীল)। ছবি : সংগৃহীত

সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরেক ভাই রক্তিম সুশীল। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে (ভেন্টিলেটর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি আহত হয়েছিলেন।

চমেকের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. হারুনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে রক্তিম সুশীলের মৃত্যু হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না।

universel cardiac hospital

রক্তিমের শ্যালক অনুপম শর্মা বলেন, জামাইবাবু মারা গেছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমার বোন ও ভাগ্নের কী হবে এখন?

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় রক্তিম সুশীলের ভাই অনুপম শীল, নিরুপম শীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীল নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় আহত রক্তিমকে ওই দিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অনুপম শর্মা তখন বলেছিলেন, দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দিন ৮ ফেব্রুয়ারি চমেকে দুলাভাইয়ের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। সেখানে না পেয়ে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে খরচ অনেক বেশি। ব্যয় বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ম্যাক্সে একদিন রেখে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। জেনারেল হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা চলে। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি আবার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। চমেকের আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। আমার বোন, ভাগ্নেসহ পুরো পরিবার তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সদ্য প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় পাঁচ ভাই অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। স্থানীয় একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাই-বোন (৭ ভাই ও ২ বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চার জনের মৃত্যু হয়। ওইদিন বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই।

এ ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মেয়ে মুন্নী সুশীল। আহত হন আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। নিহতদের বোন হীরা শীল মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।

এদিকে পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলামকে ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করেছে র‍্যাব। তাকে আটকের পর র‍্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় অতিরিক্ত কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দিতে বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে খেয়াল করেননি তিনি। গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে থাকায় কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এতে এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটে।

শেয়ার করুন