সুইস ব্যাংকের ১৮ হাজারের বেশি হিসাবের নথি ফাঁস

মত ও পথ ডেস্ক

বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম রয়েছে সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের যা সুইস ব্যাংক নামেই বেশি পরিচিত। হিসাবের পাশাপাশি হিসাবধারীর পরিচয় এবং অন্য যেকোনো তথ্যের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুইজারল্যান্ডের এই ব্যাংকটি। অথচ সেই সুইস ব্যাংকের ১৮ হাজারের বেশি হিসাবের নথি ফাঁস হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ গচ্ছিত রাখার পাশাপাশি এ সম্পদ অর্জনের পথ সবই গোপন রাখে সুইস ব্যাংক। সুইজারল্যান্ডের এই ক্রেডিট সুইস ব্যাংক বিশ্বের অন্যতম আইকনিক ব্যাংক। মূলত তথ্য গোপন রাখার কারণেই তারা বেশি আলোচিত। এখন এই ব্যাংকের গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য ফাঁস হলো, যেখানে বেরিয়ে এলো বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা, নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন ব্যবসায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী থেকে শুরু করে অনেকেই।

universel cardiac hospital

এই তথ্য ফাঁস করেছেন ব্যাংকটির এক স্বঘোষিত হুইসেলব্লোয়ার (গোপন তথ্য ফাঁসকারী)। তিনি ব্যাংকটির ১৮ হাজারের বেশি হিসাব সম্পর্কিত নথি জার্মান সংবাদমাধ্যম সুইডডয়চে সেইটুংকে সরবরাহ করেন, যেখানে জমা রয়েছে মোট ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ। এরপর সেসব নথি বিশ্লেষণের কাজে যুক্ত হয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন অর্গানাইজিং ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, লা মঁদেসহ ৩৯ দেশের ৪৮টি সংবাদমাধ্যম।

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ফাঁস হওয়া এই তথ্যের মধ্যে ১৯৪০-এর দশক থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সময়ের তথ্য রয়েছে। ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের যে গ্রাহকদের তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং মিসরের সাবেক একনায়ক হুসনি মোবারকের দুই ছেলে। রয়েছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রধান, যিনি ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের পাঠিয়েছিলেন।

সুইস সিক্রেটস অনুসন্ধানে আরও অন্তত ৪০ জনের নাম পেয়েছেন সাংবাদিকরা, যারা বিভিন্ন সময়ে ডজনখানেক দেশের গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এদের মধ্যে ভেনেজুয়েলার সাবেক আর্মি ক্যাপ্টেন কার্লোস লুই অ্যাগুইলেরা বোর্হাস, ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিসের সাবেক প্রধান ভ্যালেরি খোরশকোভস্কি, মিসরের সাবেক গুপ্তচর আশরাফ মারওয়ানের নাম রয়েছে। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন, জার্মানি, নাইজেরিয়া, উজবেকিস্তান, ইরাক, জর্ডান, ইয়েমেনের বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার নামও উঠে এসেছে।

ফাঁস হওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু অতি ধনীদেরই সেবা দিচ্ছে না ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। তারা এমনকি নানা মাধ্যম থেকে সতর্কতা জারি করার পরও বিভিন্ন মানুষকে সেবা দিয়ে গেছে, যাদের নাম শুনলে যে কেউ তাদের সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক তৈরিতে দুবার ভাববে। কিন্তু সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে ভাবার প্রয়োজন বোধ করেনি।

এ বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের অর্থপাচার বিষয়ক সংস্থার সাবেক প্রধান ডেনিয়েল থেলেসক্লাফ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা এমন উৎস থেকে পাওয়া অর্থ জমা করার ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এই আইন সাধারণত অনুসরণ করা হয় না।

এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের মুখপাত্র ক্যানডিস সান বলেন, ‘এ ধরনের সব অভিযোগ ক্রেডিট সুইস পুরোপুরি অস্বীকার করছে। একই সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলক কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও খারিজ করে দিচ্ছে।’

তাঁর ভাষ্যমতে, ফাঁস হওয়া ব্যাংক হিসাবগুলোর অধিকাংশই কয়েক দশক আগের, যখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাওয়া এবং এ সম্পর্কিত আইন, বিধি ও চর্চা এখনকার চেয়ে একেবারেই আলাদা ছিল।

শেয়ার করুন