মালয়েশিয়ায় বিদেশিকর্মী নিয়োগ : জমা পড়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৮০৭ আবেদন

মালয়েশিয়া প্রতিনিধি

মালয়েশিয়া
ফাইল ছবি

মালয়েশিয়ায় বিদেশিকর্মী নিয়োগে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৭ হাজার ৮৪৮টি উৎপাদন (শ্রমিক) খাতে। বৃক্ষরোপণ ১৩ হাজার ১১৯, পরিষেবা ১০ হাজার ৬১১, নির্মাণ ৮ হাজার ৫৩০ ও কৃষিতে ১ হাজার ৬৯৯টি আবেদন এসেছে। চলতি মাসের ১৫-২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব আবেদন করা হয়।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে যখন আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছিল তখন কিছু নিয়োগকর্তার অনলাইন আবেদনে সমস্যা হয়েছিল। প্রথম মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও) বাস্তবায়নের পর ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বিদেশি কর্মীদের আবেদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে চালু করার পর এত সংখ্যক আবেদন এসেছে।

সারাভানান জানান, নিয়োগকর্তাদেরও বেসরকারি খাতের কর্মসংস্থান সংস্থার (এপিএস) মাধ্যমে আবেদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা আগে শুধুমাত্র গৃহকর্মীর জন্য অনুমোদিত ছিল।

সম্প্রতি নিয়োগকর্তা ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সঙ্গে একটি বৈঠকের সময়, সমস্যার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল। তারা এই উদ্দেশ্যে এপিএস-এর পরিষেবাগুলো ব্যবহার করেছে। এপিএস নিয়োগকর্তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করতে পারেন এই শর্তে যে আবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তাদের অনুমতি নিয়ে জমা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মানব সম্পদমন্ত্রী।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সারাভানান বলেছিলেন, ‘দেশটি পাঁচটি (নোংরা, বিপজ্জনক, কঠিন) সেক্টরে শ্রমিকের সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, যেমন, বৃক্ষরোপণ, উৎপাদন, উন্নয়ন, কৃষি। তার আগে, সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, অবশ্যই বিদেশি কর্মীদের প্রবেশের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) মেনে চলতে হবে যা ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১-এ কোভিড-১৯ কোয়ার্টেট মিনিস্টার মিটিং দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল।’

গেলো বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খুলতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। প্রায় ৪০ মাস পর সোর্স কান্ট্রি (কর্মী পাঠানো দেশ) হিসেবে ফের যুক্ত হলো বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তুতিও শেষের দিকে। এরই মধ্যে নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে কর্মী চাহিদার আবেদন নিচ্ছে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এদিকে, সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর চলে গেছে দুই মাস। কিন্তু মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এখন পর্যন্ত কারিগরি বিষয়গুলোই চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে তিন বছরের বেশি সময় মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কর্মীদের হতাশা বাড়ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কারিগরি বিষয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। কর্মীদের দেশটিতে যেতে খরচ বা অভিবাসন ব্যয় কত হবে, ডাটা ব্যাংকে নিবন্ধন করা প্রয়োজন কি-না আর প্রয়োজন হলে কবে থেকে চালু হবে, বাংলাদেশে একটি অনলাইন পদ্ধতি চালু করা ও মালয়েশিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতির সঙ্গে এই পদ্ধতি কিভাবে যুক্ত হবে, এমন নানা বিষয়ে আলোচনা ও কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটির মহাপরিচালক শহিদুল আলম জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কিভাবে ডাটা ব্যাংক হবে, এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলছে। দেশটির চাহিদা বিবেচনা এবং ডাটা ব্যাংকসহ অনলাইন পদ্ধতি চূড়ান্ত করার কাজও করছে বিএমইটি। আর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ ও দেশটির নিয়োগদাতাদের চাহিদা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য কারিগরি ও নীতি নির্ধারণী কাজ করছে মন্ত্রণালয় (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়)।

এদিকে, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে বিমান ভাড়াসহ মালয়েশিয়া অংশের যাবতীয় খরচ বহন করার কথা নিয়োগদাতাদের। অন্যদিকে বাংলাদেশ অংশে পাসপোর্ট করা, কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা (মেডিকেল), কল্যাণ বোর্ড সদস্য ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবেন কর্মী। সেই সঙ্গে রয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ।

এসব মিলিয়ে বাংলাদেশ অংশে একটি সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করতে হবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানানো হলেও, দুই মাসেও তা চূড়ান্ত করতে পারেননি কর্মকর্তারা।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ সবশেষ জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। যদিও আমার এই উদ্দেশ্যকে ব্যবসায়ীদের কয়েকটি গ্রুপ ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। আমার উদ্দেশ্যটা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই। প্রথমত আমার উদ্দেশ্য হলো আমার দেশ, দ্বিতীয়ত হচ্ছে আমার কর্মীরা। এই দুটিই হচ্ছে আমার উদ্দেশ্য। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের স্বার্থ দেখছে, কর্মীদের স্বার্থ দেখছে না। এখানে আমি একমাত্র কর্মীদের স্বার্থ নিয়েই থাকবো।

মালয়েশিয়া কর্মী নিয়ে তাদের অংশে প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। কর্মী চাহিদাপত্র অনুমোদনও শুরু করেছে দেশটির সরকার কিন্তু কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশে প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমাদের ডাটাব্যাংক প্রস্তত আছে। অন্য বিষয়গুলোও চূড়ান্ত প্রায়। মোট কথা আমরা প্রস্তুত আছি।

অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতাদের কর্মী চাহিদাপত্র বা মূল ভিসা আনার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের সত্যায়ন বাধ্যতামূলক। হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করুন