জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন ২১৬ রান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ দল
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সংগৃহীত ছবি

২১৮ দিন পর ওয়ানডে খেলতে নামা বাংলাদেশ দলের শুরুটা অন্তত মন্দ বার্তা দিচ্ছে না। ঠিক যেখানে শেষ করেছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল, সে পথেই হাঁটছে তারা। একদিনের ক্রিকেটে শেষ ৬ ম্যাচে ৫টায় জেতা দলটি আজ (বুধবার) মুখোমুখি হয়ে আফগানিস্তানের। সাগরিকার পাড়ে আগে ব্যাট করতে নামা সফরকারীদের ২১৫ রানে থামিয়েছে স্বাগতিকরা। ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিততে বাংলাদেশ দলের প্রয়োজন ২১৬ রান।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরই ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কথা। টস জেতা দলই এখানে আগে ব্যাটিং বেছে নেয়। ব্যত্যয় হলো না এ ম্যাচেও। টসের লড়াইয়ে পরাজয় তামিমের। মলিন কণ্ঠে চট্টগ্রামের ঘরের ছেলে তামিম জানালেন, তিনি এবং তার দল চেয়েছিল ব্যাটটা আগে হাতে তুলতে।

universel cardiac hospital

তামিমের সে আক্ষেপ ঘোচাতে অবশ্য বেশিক্ষণ সময় নেননি মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন তিনি। মুস্তাফিজ যেন বার্তা দিলেন বোলারদের উপরেও আস্থা রাখতে পারো অধিনায়ক! তাসকিন আহমেদের করা আগের ওভারে কঠিন একটি সুযোগ দিয়েও বেঁচে যান রহমানউল্লাহ তবে সুবিধা করতে পারেননি বেশিক্ষণ। মুস্তাফিজকে উড়িয়ে বাউন্ডারির বাইরে ফেলতে চাইলে মিডঅনে ক‍্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৪ বলে ১ চারে ৭ রানে

দলীয় ১১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সফরকারী শিবির। ইব্রাহিম জাদরান আর রহমত শাহ দেখেশুনে খেলতে থাকেন। সে জুটি আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল ইব্রাহিম দুই বার সহজ জীবন পাওয়ায়। পরে।স্বাগতিকদের ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল। এই বাঁহাতি পেসারের বেরিয়ে যাওয়া বলে ড্রাইভ করার চেষ্টায় স্লিপে ক‍্যাচ দেন ইব্রাহিম। প্রথম চেষ্টায় ধরতে পারেননি ইয়াসির আলি, তবে হাত ও শরীর দিয়ে কোনোমতে আটকান অভিষিক্ত এই ক্রিকেটার। ১৯ রানে সাজঘরে ইব্রাহিম। ভাঙে ৬৫ বলে গড়া ৪৫ রানের জুটি।

দুই পেসার দুই ওপেনারকে ফেরানো পর তৃতীয় ধাক্কা দেন আরেক পেসার তাসকিন। সতীর্থরা ক্যাচ না ছাড়লে উইকেটের দেখা অবশ্য আগেই পেতে পার‍তেন তিনি। তবে এবার তাসকিনকে হতাশ হতে দিলেন না মুশফিকুর রহিম। এক প্রান্ত আগলে রেখে রান তুলছিলেন রহমত। হাঁটছিলেন অর্ধশতকের পথে পথে। তাসকিনের ব্যাক অব লেন্থের বলে রহমতের ব্যাট ছুঁয়ে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকের গ্লাভসে। ৬৯ বলে ৩ চারে ৩৪ রান করে সাজঘরে রহমত।

ওই ৩ উইকেটেই দলীয় রান একশোর কোটা ছুঁয় আফগানিস্তান। একপ্রান্তে টানা বল করে রান আটকে রাখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রতিপক্ষের অফ স্পিনের দুর্বলতা বুঝতে পেরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক তামিম। ইনিংসের ২৮তম ওভারে প্রথমবার হাত ঘোরাতে এসেই সফল মাহমুদউল্লাহ। মুশফিকের সাহায্য নিয়ে আউট করেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের সোজা বলে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন হাসমতুল্লাহ। ৩ চার ও ১ ছয়ে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে ২৮ রান।

১০২ রানে ৪ উইকেট হারানো পর পঞ্চম উইকেটে নাজিবউল্লাহ জাদরান আর অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এই জুটির উপর ভর করেই স্কোর বোর্ডে ২০০ ছাড়ানো স্কোর পায় আফগানিস্তান। এই জুটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালে বোলিংয়ে বৈচিত্র আনেন তামিম। মিরাজ, সাকিব, শফিকুল, মুস্তাফিজরা সফলতার দেখা পাচ্ছিলেন না। পরে তাসকিনকে আক্রমণে ফেরান তামিম। অধিনায়কের আস্থান মান রাখেন এই পেসার।

তাসকিনের করা ইনিংসের ৩৯তম ওভারের প্রথম বলে কাভার দিয়ে চার মারেন নবী। পরের বল কাট করার চেষ্টায় ব‍্যাটে-বলে করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। পরের বলে আবার ড্রাইভ করেন, এবার ব‍্যাটের কানায় লেগে ক‍্যাচ যায় মুশফিকের গ্লাভসে। ২৪ বলে দুই চারে ২০ রান করেন নবি। ভাঙে ৬৩ বলে খেলা ৬৩ রানের জুটি।

এরপর নাজিবউল্লাহ একপ্রান্ত ধরে খেলে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতক তুলে নেন। তবে অন্যপাশে বাংলাদেশি বোলারদের ধ্বংসলীলায় সুবিধা করতে পারেননি বাকিরা। সাকিব শুরুতে ছিলেন বেশ খরুচে ছিলেন, পাচ্ছিলেন না উইকেটের দেখা। সেই সাকিব ইনিংসের ৪৫তম ওভারে এসে জোড়া আঘাতে ফেরান গুলবাদিন নাইব আর পাকিস্তান সুপার লিগ মাতিয়ে আসা রাশিদ খানকে।

সাকিবের ১০ ওভারের কোটার ৯ নম্বর ওভারের তৃতীয় বলটিতে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন গুলবাদিন। বল ব্যাট মিস করে লাগে পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ২১ বলে ১৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। রশিদ খান বুঝতেই পারেননি সাকিবের ফ্লাইটেড ডেলিভারি। নিমিষেই ভেঙে দেয় উইকেট। সাজঘরে ফেরেন ০ রানে।

খানিক পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা মুজিব উর রহমানকে ফেরান মুস্তাফিজ। রানের খাতা খুলতে পারেননি মুজিব। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে শ্লথ হয়ে থাকা রানের গতি ফেরান নাজিবউল্লাহ। শেষদিকে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তার ব্যাট থেকে আসে ৮৪ বলে ৬৭ রান। যেখানে ৪টি চার ও ২টি ছয় মেরে শরিফুলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। মূলত নাজিবউল্লাহর ব্যাটে চেপেই নির্ধারিত শেষ ওভার অলআউট হওয়ার আগে স্কোর বোর্ডে ২১৫ রানের পুঁজি পায় আফিগানিস্তান।

বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ ৩টি এবং শরিফুল, সাকিব আর তাসকিন প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট নেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পান বাকি ১ উইকেট।

শেয়ার করুন