নন্দিত গীতিকবি কাওসার আহমেদ চৌধুরী আর নেই

মত ও পথ প্রতিবেদক

‘এই রুপালি গিটার ফেলে/একদিন চলে যাব দূরে, বহুদূরে/ সেদিন চোখের অশ্রু তুমি রেখ/গোপন করে….’। এটি গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা কালজয়ী একটি গান। গানের কথার মতোই বাস্তবেও সবাইকে অশ্রুজলে ভাসিয়ে এই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে গেলেন নন্দিত গীতিকবি ও জনপ্রিয় জ্যোতিষী কাওসার আহমেদ চৌধুরী। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ৭৭ বছর বয়সে মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

প্রবীণ এই গীতিকারের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ছেলে আহমেদ শাফি চৌধুরী। তিনি জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যা ও রক্তে সংক্রমণসহ শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। এছাড়া তিনি দুইবার স্টোকও করেন।

শারীরিক নানা অসুস্থতার কারণে গত বুধবার তাঁকে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে নেওয়া হয় ধানমন্ডি ক্লিনিকে। মঙ্গলবার রাতে সেখানেই তিনি মারা যান।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগীতাঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে যায়। ক্লিনিকে ছুটে আসা সংগীত পরিচালক ফুয়াদ নাসের বাবু বলেন, আমি জীবনে যে কটা গান গেয়েছি সবই তাঁর লেখা। তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় এক ক্ষতি।

সংগীতায়োজক এজাজ খান স্বপন বলেন, তিনি অনেক কালজয়ী গান লিখেছেন। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কখনো পুরস্কারের পেছনে ছোটেন নি।

গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী কালজয়ী অনেক গান রচনা করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে-তে সাপ্তাহিক রাশিফল ‘আপনার রাশি’ লেখা শুরু করেন। নিজের লেখা রাশিফলের শুরুতেই তিনি লিখতেন, ‘নিজের ভাগ্য নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় শতকরা ৯০ থেকে ৯৬ ভাগ। বাকিটা ফেট বা নিয়তি।’

রাশিচক্রে ‘নিউমারলজি’ বা ‘সংখ্যা-জ্যোতিষ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন তিনি।

তাঁর লেখা জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে আছে, ‘এই রুপালি গিটার ফেলে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে’, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না শুনে’, ‘আমায় ডেকো না’ ইত্যাদি। প্রথমা প্রকাশন প্রকাশিত ভাগ্য গণনার সহজ উপায় বইটি লিখেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। এ ছাড়া ঘুম কিনে খাই নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

১৯৪৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিলেটে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। তাঁর বাবা মোসাহেদ চৌধুরী। কাওসার আহমেদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। চারুকলায় পড়াশোনা করলেও সম্পন্ন করেননি। চলচ্চিত্রে নির্মাণে তাঁর আগ্রহ ছিল। একাধিক তথ্যচিত্রও তিনি নির্মাণ করেন। পেশাজীবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি করেছেন।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর নামাজে জানাজা আজ সকাল নয়টায় ধানমন্ডির ত্বাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর পরিবার।

শেয়ার করুন