‘শান্তিকে সুযোগ দিন’

সম্পাদকীয়

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা । সংগৃহীত ছবি

বৈশ্বিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে ইউক্রেনে ‘বেপরোয়া ও উস্কানিবিহীন হামলা’ শুরু করেছে রাশিয়া। বারবার সতর্কতা ও প্রভাবশালী দেশগুলোর অক্লান্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একটি সার্বভৌম, স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়েছে রাশিয়া। যা আর্ন্তজাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্গন ও ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। রাশিয়ার এ আগ্রাসন ইউক্রেনের চার কোটি ৪০ লাখ মানুষকে কোন দুর্দশার দিকে ঠেলে দিতে পারে, বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব কতটুকু পড়বে, এর সঠিক চিত্র এখনোই নিরূপণ করা যাচ্ছে না।

সবশেষ খবরে ইউক্রেনে রাশিয়ার পাঁচটি বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছে আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও এএফপি। হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন, ১৯ জনের কোনো খোঁজ মিলছে না। ইউক্রেনের চারপাশ দিয়ে রুশ সেনারা ঢুকে পড়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে ‘সেনা অভিযান’ পরিচালনার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন, ইউক্রেনে মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনের স্থাপনা ও সীমান্তরক্ষীদের ওপর মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। জেলনস্কি বলেন, ইউক্রেনের অবকাঠামো ও সীমান্ত রক্ষীদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এ অবস্থায় দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেন আক্রমণের মধ্য দিয়ে রাশিয়া আগামী দিনগুলোয় ইউরোপে একটি বড় যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।

হামলার কারণে ইউক্রেনের মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পুতিনকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেন ‘শান্তিকে সুযোগ দিন’। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসেছে।

পুতিনের ‘যুদ্ধ-ঘোষণার’ পরে ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করলেও সেখানে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেনা পাঠানোর বিষয়ে চুপ ন্যাটো। এ পরিস্থিতিতে বহিরাগত বাহিনীর প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া রুশ হামলা ঠেকানো ইউক্রেনের পক্ষে কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

অনেক পর্যবেক্ষক আশাবাদী, সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রতিহত করা যাবে। আমরাও আশাবাদী হতে চাই, সর্বাত্মক যুদ্ধ না হোক। স্বাধীন কোনো দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করা বন্ধ হোক। সব পক্ষ সংযত হোক। আগ্রাসন বন্ধে বিশ্বনেতারা কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেবেন।

কারণ, রাশিয়ার আগ্রাসনে পূর্ব ইউরোপজুড়ে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিঘ্নিত হতে পারে পণ্যের সরবরাহ, যার প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিশ্ব অর্থনীতিতে আঘাত করেছে। এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধ হবে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’।

শেয়ার করুন