যুদ্ধ ঘোষণার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর শর্ত সাপেক্ষে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। শর্ত দুটি হচ্ছে—ইউক্রেনের সেনাকে অস্ত্র সংবরণ করতে হবে এবং পাল্টা প্রতিরোধ করা চলবে না।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ এই কথা বলেছেন।
এদিকে রাশিয়ার প্রস্তাব মেনে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইউক্রেনও। দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক শুক্রবার রয়টার্সকে বলেছেন, কিয়েভ শান্তি চায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের ঘোষণা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর থেকেই ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করতে শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের যুদ্ধেই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শহর খারকিভ এবং পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চেরনোবিলের দখল নেয় রুশ বাহিনী।
যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে পুতিন বাহিনী পৌঁছে যায় রাজধানী কিভের কাছাকাছি। যেখানে এখনো রয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমির জেলেনস্কি। এরপর শুক্রবার বিকালেই এলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা।
বার্তা সংস্থা এএফপি টুইট করে ওই ঘোষণার কথা জানিয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে পুতিনের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বন্ধে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো কার্যতভাবে এগিয়ে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি। এ অবস্থায় দেশের জনগণকে মলটেভ ককটেল (যা পেট্রোল বোমা নামেও পরিচিত) তৈরিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রথম দিনের হামলাকে সফল বলে দাবি করেছে রাশিয়া। তারা ইউক্রেনের বিমানঘাঁটিগুলোর সামরিক কাঠামো ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে। প্রথম দিনই রুশ সেনারা কিয়েভের উপকণ্ঠের আন্দোনোভ বিমানবন্দর দখলে নেন। নিয়ন্ত্রণ নেন বেলারুশ সীমান্তবর্তী চেরনোবিল পরমাণুকেন্দ্র।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বলেছে, অভিযানে ইউক্রেনের ৭৪টি সামরিক স্থাপনা ও ১১টি বিমানঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রধান মুখপাত্র ইগোর কোনাশেনকভ বলেন, প্রথম দিন যে লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালিয়েছে তা অর্জন করতে তার দেশের সামরিক বাহিনী সক্ষম হয়েছে।
হামলায় নিজেদের ১৩৭ সেনা নিহতের তথ্যও জানিয়েছে ইউক্রেন। পাশাপাশি অর্ধশত রুশ সেনাকে হত্যার দাবিও করেছে দেশটি।
- আরও পড়ুন >> বামদলগুলোর ‘রহস্যময়’ নিরবতা!
তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেল বলছেন, ইউক্রেনের হামলায় প্রতিপক্ষের ৪৫০ সেনা নিহত হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসিসহ, রয়টার্সসহ কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। রাশিয়াও বিষয়টি স্বীকার করেনি।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে রুশ আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন সবাই পিছু হটেছে। ইতিমধ্যে অনেক সামরিক সরঞ্জামও পাঠানো হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার পক্ষ থেকে। তবে রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে ঠেকাতে সেসবের কিছুই কাজে আসবে না বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের।
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট শুরু হয় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। কিন্তু বিষয়টি মানতে নারাজ রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার পুতিনও অভিযোগ করে বলেছেন, তারা সামরিক অভিযান শুরু করতে চাননি। তারা কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার কোনো সম্ভাবনা পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি।
পুতিন আরও বলেছিলেন, ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য ঠেকাতে সর্বদা কাজ করেছে পশ্চিমারা। এতদিন আমরা নিশ্চুপ ছিলাম। কিন্তু এখন তা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদিও রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তার অভিযোগ, রাশিয়া ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। তিনি ‘মানবতার দোহাই’ দিয়ে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।