নতুন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বাগত, অভিনন্দন জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল। সদ্য গঠিত ইসিকে আগেই ‘প্রত্যাখান’ করায় বিএনপির এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ‘ভিন্ন’। জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধিদল জাতীয় পার্টি (জাপা) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে ইসির কার্যক্রম দেখতে চায়। কয়েকটি বামদল ইসিকে নিয়ে আছে ‘সন্দেহের দোলাচলে’। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁদের ‘মিশ্র প্রতিক্রিয়ার’ কথা জানা যায়।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে কারো কারো অভিযোগ, নতুন ইসিতে সাবেক আমলাদেরকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ভোটের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ফেরানো নবগঠিত ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) নতুন চার নির্বাচন কমিশনারের আগের পেশাগত জীবনের কর্মদক্ষতা, সততা, কোনো বিতর্কে জড়িয়েছেন কী না, ইত্যাদি এখন আলোচনায়। অনুসন্ধান কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা যেসব সুপারিশ করেন, ইসিতে এর প্রতিফলন নিয়েও বিশ্লেষণ চলছে।
নতুন ইসি ‘দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে’ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সব দল অংশ নেওয়ার একটি নির্বাচন উপহার দিতে নতুন ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার’ও আশ্বাস দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মত ও পথকে বলেন, ‘নতুন সিইসি ভালো মানুষ, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। তাঁর দায়িত্ব নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। এই ব্যাপারে আমরা তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। আমাদের প্রত্যাশা, আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, একে আরো শক্তিশালী করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে ইসি।’
যোগাযোগ করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু শনিবার রাতে মত ও পথকে মুঠোফোনে বলেন, ‘বিএনপি এই ইসিকে প্রত্যাখান করার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। ইসি নির্বাচন করে না। নির্বাচনটা করে প্রশাসন। এই কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাই প্রতিক্রিয়াও নেই।’ নতুন কমিশন নিয়ে ‘এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন’ জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মত ও পথকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষের নির্বাচনের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে কাজ করবে নতুন কমিশন- এমনটাই আমি আশা করছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনি ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নানা কারণে ভেঙে পড়েছে। এই ভেঙে পড়া ইসিকে পুনর্গঠন, পুনর্বিন্যাস করে এবং নির্বাচনের প্রতি জন আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন ইসির জন্য আগামী দিনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য অনেক শর্ত প্রযোজ্য। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম- সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকা। সরকার এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে। তাই নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না, তা বুঝাই যায়।’ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অনেক যাচাই-বাছাই করে কমিশনের সদস্যদের নির্বাচন করা হয়েছে। তাঁরা তা প্রমাণ করবেন, এটাই সবার কাম্য।’
নিজের দেওয়া তালিকা থেকে সিইসি বেছে নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকার একটা ভালো কাজ করল। সব বিরোধিদলকে বলব সিইসিকে মেনে নিতে। নতুন সিইসি খারাপ করবেন না। তিনি সচিব থাকাকালে তদ্বির করেননি। তদবির করে এক্সটেনশন নেননি। তাঁর সততার জোর আছে। তিনি পারবেন আমাদের প্রত্যাশিত ইসির নেতৃত্ব দিতে।’
যোগাযোগ করলে লেখক, গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান মত ও পথকে বলেন, ‘নতুন কমিশন শপথ নেওয়ার পর প্রথমদিন থেকে তাদেরকে দেশবাসীর আস্থা অর্জনের পরীক্ষায় নামতে হবে। গত সংসদ নির্বাচনের পর ইসির ব্যাপারে বড় রকমের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকে শুধু একটা ভালো ইসি গঠনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন না।’
তিনি বলেন, ‘কমিশনের প্রায় সবার অভিজ্ঞতা সরকারি চাকরির। সাংবিধানিক পদের দায়িত্ব নিয়ে তাঁরা কতোটা সততা, সাহস, দৃঢ়তার সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে এবং শেষ পর্যন্ত তা সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন, সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। কারণ, সরকারি চাকরিতে আনুগত্য একটা বড় গুণ। ইসির কাছে প্রধানত প্রত্যাশা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘পুরনো ছকে নতুন ইসি গঠিত হয়েছে। কেন এটা হয়েছে, বোধগম্য নয়। আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কমিশনের সদস্যদের বাছাইয়ের সুপারিশ করা হয়েছিল। সেগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।’