টানা চারদিন ধরে চলছে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান। স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে সর্বাত্মক হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী। চতুর্থ দিন রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাজধানী কিয়েভে এর আশপাশে একাধিক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। এদিকে বিশাল রুশ বাহিনী চারদিক থেকে এগিয়ে আসায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় কিয়েভ।
রোববার ভোরে ইউক্রেনের রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলে দুটি বিকট বিস্ফোরণে শব্দ শোনা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। এতে বিস্ফোরণে আকাশে আলোর ঝলকানি দেখা যায়। বিস্ফোরণগুলো ভাসিলকিভের আশপাশে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে রুশ বাহিনীর। রাজধানী কিয়েভ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের ওই এলাকায় একটি বড় সামরিক ঘাঁটি এবং একাধিক জ্বালানি ট্যাংক রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর শহর মাইকোলাইভে শনিবার রাতে একটি বিস্ফোরণে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেখানেও ভারী গোলাগুলি চলছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইউক্রেনের অনেক শহরের রাস্তায় রুশ সেনারা অবস্থান করছে। তবে সংখ্যায় ইউক্রেনের সেনা কম হলেও তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর আগে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, তাদের বাহিনীকে ইউক্রেনের সব দিক থেকেই আক্রমণের জন্য পুনরায় নির্দেশ দেয় বলে খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাশিয়া এবং বেলারুশের সঙ্গে আগামী সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে দেশ দুটিতে থাকা নিজেদের নাগরিকরাই শুধু ইউক্রেনের প্রবেশ করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ একটা ভয়াবহ লড়াই অব্যাহত দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে। যেটি রুশ সীমান্তের একদমই কাছাকাছি।
তবে একাধিক পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন মস্কোর প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত হয়নি। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া এখনও ইউক্রেনের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। ‘যা রাশিয়ার বিমানবাহিনীর কার্যকরিতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে’।
ইউক্রেন অভিযানের চতুর্থদিনের মাথায় রুশ বাহিনী ব্যাপকভাবে লজিস্টিক্যাল সংকট এবং ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। ফলে রুশ অভিযানের গতি কিছুটা কমে গেছে। শনিবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্রিটেনের মন্ত্রণালয় এমনটাই জানিয়েছে।
কিন্তু রাশিয়ার বেশিরভাগ বাহিনী রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্র থেকে মাত্র ১৮.৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। যতো এগিয়ে যাবে হতাহতের সংখ্যাও বাড়বে। পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের দেখায়, টিওএস-১ অথবা টিওএস-১এ রকেট লঞ্চার রয়েছে রাশিয়ার। তবে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে থার্মোবারিক অস্ত্র এখনও পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তার কোনও প্রমাণ নেই।
অব্যাহত যুদ্ধে নিজেদের কোনও সেনা হতাহতের খবর দেয়নি মস্কো। তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেছেন, তার সেনাবাহিনীর শত শত রুশ সেনাকে হত্যা করেছে। যদিও এর সঠিক পরিসংখ্যান দেননি তিনি। শুক্রবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছিলেন, রাশিয়ার ৪৫০ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
সূত্র: সিএনএন