অধিগ্রহণের জমিতে স্থাপনা ঠেকানোর নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জমি অধিগ্রহণের কথা শুনে অনেকে রাতারাতি জমিতে খুঁটি গেঁড়ে বাবা-দাদার ভিটা বলে দাবি করেন। অধিগ্রহণ করা এসব জমির ছবি তুলে রাখার পাশাপাশি সেখানে স্থাপনা নির্মাণ ঠেকানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

universel cardiac hospital

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) উপস্থাপন করা হয়। পরে তা অনুমোদন দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধন করা হয়েছে। মূল এডিপি থেকে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ৮ শতাংশ কাটছাঁট করে দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেন, আমরা এ বাজেট নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। সব কিছু ছাপিয়ে শঙ্কা কাটিয়ে উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, যেকোনো প্রকল্প নেওয়ার আগে প্রকল্প এলাকার ছবি তুলে রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার নানা ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সব থেকে বড় সমস্যা জমি অধিগ্রহণ।

‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জমি অধিগ্রহণের কথা শুনে অনেকে রাতারাতি জমিতে খুঁটি গেড়ে বসেন। অনেকে ফসলের জমিকে বসতবাড়ি হিসেবে জাহির করেন। অনেকে বলে বাপ-দাদার ভিটা, জমিতে এটা ছিল, ওটা ছিল, তাজমহল ছিল’—যোগ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী জমির সঠিক মূল্য দিতে বলেছেন। তিনি জমির ছবি তুলে রাখতে বলেছেন যাতে জমি অধিগ্রহণের সময় কেউ বলতে না পারে আমার জমিতে বিল্ডিং ছিল।’

সরকার চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছিল। অনেক প্রকল্পে সব টাকা ব্যয় হচ্ছে না। ফলে সংশোধিত এডিপি বা চূড়ান্ত বরাদ্দ কমছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দ করা অর্থের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি এবং দেশীয় অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, অনুমোদিত আরএডিপির চেয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। মোট ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৭ কোটি চাহিদা ছিল। আরএডিপিতে নতুন প্রকল্প বেড়েছে ২৩৬টি। মোট প্রকল্প দাঁড়িয়েছে ১৭০০টিতে।

এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৫২০, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪২ এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ১০৮টি প্রকল্প।

স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট প্রকল্প সংখ্যা ১০৭টি। এসব প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। মূল এডিপি থেকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দ আলাদা করা হয়।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে তিন হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে। চলমান উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৫৬৭ কোটি টাকা। তবে ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পে।

সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া ১০ প্রকল্প:

এডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। তিন হাজার ৫৯০ কোটি টাকা কমে এই প্রকল্পে চূড়ান্ত এডিপিতে বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পে এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ৫৬৭ কোটি টাকা কমে চূড়ান্ত বা আরএডিপিতে বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা।

তবে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে বরাদ্দ ঠিক থাকছে। এ প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।

প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় বাড়ছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ কাজে। এডিপিতে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পেও প্রায় হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। এ প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্প: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও বরাদ্দ কমছে। এডিপিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়।

ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৭৫ কোটি টাকা। এডিপিতে ঢাকা-সিলেট ফোরলেনে মোট বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ১০ খাত: পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষায় ২০ হাজার ৮২৪ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৫ হাজার ৫২০ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ৯ হাজার ৮৪ কোটি, কৃষিতে ৭ হাজার ২৭৯ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন