মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হাওয়া থেকে পাওয়া কোনো বিষয় না : মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হাওয়া থেকে পাওয়া কোনো বিষয় না। এটা আমাদের রক্ত মাংস দিয়ে অর্জন করা একটা বিষয়। আজকে আমরা যেই দেশটিতে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করছি, এই স্বাধীনতার জন্য আমাদের অনেক লড়াই করতে হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমরা একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে সামনে রেখে স্বাধীনতার যুদ্ধে গিয়েছিলাম। ইউক্রেনের লোকেরা তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেভাবে যুদ্ধ করছে তারচেয়েও দৃঢ়সংকল্পে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। তারা তো একটি স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছে, আর আমরা একটি পরাধীন দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করছিলাম। আমরা জানতাম না, যুদ্ধের মাঠ থেকে আমরা ফিরে আসব। আমার মা যখন আমাকে বিদায় করেন, তখন তিনি জানতেন না, তাঁর ছেলেটি আবার তাঁর কোলে ফিরে আসবে। কাজেই বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশটাকে আপনাদের কাজে লাগাতে হবে।

শুক্রবার (৪ মার্চ) বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট’-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়েছে, এখন আপনাদের কাছে বিষয়টাকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে, কারণ আপনারা তো দেখেননি যুদ্ধের সেই বিভৎসতা। যারা দেখতে চান, তাহলে তারা টেলিভিশন দেখবেন। যুদ্ধের যে বিভৎসতা, যুদ্ধের যে রুদ্ররূপ তার কিছুটা হলেও আপনারা উপলব্ধি করতে পারবেন। কেননা আমাদের যুদ্ধটাও তারচেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না, বরং বেশিই ছিল। আমাদের যারা শহীদ হয়েছেন তারা কিন্তু জানেন না যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে দাঁড়িয়ে আমি আপনাদের সাথে কথা বলছি, এটি একটি স্বাধীন দেশ, যে দেশটির জন্য তারা জীবন দিয়েছেন; সেই দেশটি স্বাধীন হয়েছে। সুতরাং এই দিকটি আপনাদের কাছে যদি গুরুত্বপূর্ণ না-ও হয়, আমি বলব- নিজেদের কথা চিন্তা না করলেও আপনাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপনারা দেশটির গুরুত্বের কথা ভাবুন।

তিনি বলেন, আজকে এখানে ডিসি আছেন, এসপি আছেন। পাকিস্তান আমলেও এই শহরে অনেক মহকুমা প্রশাসক এসেছেন, কিন্তু এর একটা বড় অংশ বাংলা ভাষাভাষী ছিল না। আমার গ্রামের বাড়ি একটি অজপাড়াগাঁ। সেখানে একটি স্কুল আছে, ১৯৫২ সালে এটি আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সেই স্কুলের সভাপতির পদটাও এসডিও সাহেব ( যিনি ছিলেন নন বেঙল, উর্দুতে কথা বলতেন) তিনি দখল করেছিলেন। বাংলা ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে এই যে একটি সর্বগ্রাসী অবস্থা সেই অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে আপনি যে বাংলা ভাষায় কথা বলছেন- এটি তাৎপর্য আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, খেলাধুলা মানুষকে অপকর্ম থেকে দূরে রাখার একটি বড় হাতিয়ার। আমাদের কিছু বিভ্রান্তিমূলক বিষয় আছে। অনেকেই মনে করেন, খেলাধুলা হয়তো ধর্মীয়ভাবে সঠিক নয়। তারা হয়তো জানেন না, আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) তাঁর সহধর্মিণী উম্মুল মুমিনিন হয়রত আয়েশা (রাঃ)-কে নিয়ে নিজে খেলাধুলা করেছেন।

তিনি বলেন, শরীরের সাথে মনের একটা যোগাযোগ থাকে। মনকে সতেজ রাখতে হলে শরীরকে সতেজ রাখতে হবে, আর শরীরকে সতেজ রাখতে হলে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই।।

জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোঃ শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির।

শেয়ার করুন