দায়িত্ব এটিএম বুথে টাকা রাখা, করতেন ‘আত্মসাৎ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

এটিএম থেকে অর্থ আত্মসাতে জড়িত সন্দেহে গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছবি : সংগৃহীত

গত ২-৩ বছর একসঙ্গে চাকরির সুবাদে গড়ে উঠে ৮ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের।। তাদের কাজ হলো এটিএম বুথে টাকা রাখা। তাঁরা রাখতেনও। কিন্তু এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারা নিজেরাই অভিনব কৌশলে বুথ থেকেই আবার টাকা হাতিয়ে নিতো। এভাবে গত দুই-তিন বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের।

শনিবার (৫ মার্চ) র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব- ৪ এর একটি যৌথ দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের এই আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো- আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২), তারেক আজিজ (২৫), তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান (২৮), রবিউল হাসান (২৭), হাবিবুর রহমান ওরফে ইলিয়াস (৩৬), কামরুল হাসান (৪৩), সুজন মিয়া (৩১) ও আব্দুল কাদের (৪৩)। তাদের কাছ থেকে ২টি চেকবই, ১টি এটিএম কার্ড, ৪টি আইডিকার্ড, একটি স্বর্ণের নেকলেস, এক জোড়া বালা, এক জোড়া কানের দুল, একটি আংটি এবং নগদ ৯ ল ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

আজ রোববার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের ব্যবস্থাপনা থার্ড পার্টি বা আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। থার্ড পার্টি টাকা স্থাপন, নিরাপত্তা, কারিগরি ত্রুটি ইত্যাদি বিষয়টি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি পরিবর্তন করে। তারপরও এটিএম বুথে অনিয়ম ও গড়মিল পাওয়া গেলে তারা বিষয়টি র‌্যাবকে জানায়।

খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাব বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব জানতে পারে থার্ড পার্টি পরিবর্তন করা হলেও এটিএম বুথে টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরি দলের কোনও পরিবর্তন হয়নি। পরে তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করে আট জনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পরস্পর যোগসাজশে অভিনব কৌশলে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, অভিনব কৌশলে এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাৎকারী এই চক্রের মূল হোতা হলো আব্দুর রহমান। সে এক সহকর্মীর কাছ থেকে এই কৌশলটি শেখার পর একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি করে। তারা সবাই এটিএম বুথের কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং ও মেইটেন্যান্স-এর দায়িত্ব পালন করে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারকৃতরা বেসরকারি ওই ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করতো। গ্রেফতারকৃতরা এটিএম বুথে টাকা লোড করার সময় লোডিং ট্রেতে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত। কোনও ক্লায়েন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ওই পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবিনে জমা হত। পরবর্তীতে সেই টাকা এই চক্রের সদস্যরা সরিয়ে নিতো।

শেয়ার করুন