রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি যুদ্ধ বন্ধ নয়, দোষারোপের জন্য ছিল : ড. মোমেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

এ কে আবদুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ফাইল ছবি

ইউক্রেনে হামলার অভিযোগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা খসড়া প্রস্তাবে বাংলাদেশের ভোটদানে বিরত থাকার কারণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, খসড়া প্রস্তাবটি যুদ্ধ বন্ধের জন্য নয়, দোষারোপের জন্য ছিল। তাই বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।

আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

universel cardiac hospital

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর প্রতিবাদে সাধারণ পরিষদ একটি জরুরি অধিবেশন ডাকে। আলোচনা শেষে ২ মার্চ রাতে সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। এই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল অর্থাৎ নিরপেক্ষ অবস্থান নেয় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল, চীনসহ ৩৫টি দেশ। ১৯৩ সদস্য দেশের পরিষদে ওই প্রস্তাবের পক্ষের সমর্থন দেয় ১৪১ দেশ। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে রাশিয়াসহ ৫ দেশের। বাকি দেশগুলো হলো- বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া ও সিরিয়া।

সাধারণ পরিষদের খসড়া প্রস্তাবে বাংলাদেশ কেন ভোটদানে বিরত ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খসড়া প্রস্তাবটি পড়লে দেখবেন, এটা যুদ্ধ বন্ধের জন্য নয়। কাউকে দোষারোপের জন্য এটি। আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই না, কোথাও যুদ্ধ হোক। এ জন্য আমরা জাতিসংঘে বলেছি, যে দুর্ঘটনা হচ্ছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী সোমবার আরব আমিরাতে যাচ্ছেন।

সব দেশ জাতিসংঘের সনদ মেনে চলবে, এমন প্রত্যাশা করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এই সনদ অনুসরণ করে আমাদের অগ্রসর হওয়া উচিত। বাংলাদেশ সব সময় আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। এই সংঘাতের যেন শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। সে জন্য ওনাকে আমরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছি।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোটে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও আরব আমিরাত ইউক্রেনের পক্ষে অবস্থান নেয়। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ইউক্রেন নিয়ে কোনো আলোচনা তোলা হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা নিয়ে আলোচনা তুলতে চাই না।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে ৪টি এমওইউ হবে

প্রধানমন্ত্রীর আরব আমিরাত সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের মোট আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। তবে বাণিজ্য ঘাটতি এখনো দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মূল কারণ আমরা তাদের কাছ থেকে শুধু জ্বালানি তেল আমদানি করি। রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য এই সফরে গুরুত্বারোপ করা হবে। সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সরাসরি শিপিং সার্ভিস চালু নিয়ে আলোচনা করা হবে।

মোমেন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়েছিলাম, তখন এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরে তা আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ টেকসই উন্নয়নের জন্য আমিরাতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে আলোচনায় বসব। এছাড়া আইসিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দুই দেশের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময়ের নতুন নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে ইচ্ছুক।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে কয়টি এমওইউ হবে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, এ সফরে আমরা চারটির মতো এমওইউ করব। তবে কোন বিষয়গুলোতে এমওইউ করা হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি।

বাংলাদেশের জন্য আমিরাত কেন গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের দেশের একটি বড় শ্রমবাজার হলো মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এই একটি দেশ থেকেই বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক অত্যন্ত সলিড জানিয়ে মোমেন বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, সলিড রিলেশন। তারা আমাদের অনেক সম্মান দেয়। প্রধানমন্ত্রীকে তারা এ সফরে সর্বোচ্চ সম্মান দেবে। আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করছি।

যা থাকছে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে

আমিরাত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করবেন। একইসঙ্গে মঙ্গলবার বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। সফরে তিনি আমিরাতের জাতির মাতা শেখা ফাতিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যা একটি দুর্লভ সুযোগ।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাস আল খাইমাতে বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুল ‘বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল’-এর নতুন ক্যাম্পাসে একটি ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।

শেয়ার করুন