ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম ছুটছে উর্ধ্বগতিতে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে। এ বিষয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে আলোচনা চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটির ‘ক্ষমতাশালী’ দুই যুবরাজ বাইডেনকে পাত্তা দিচ্ছেন না বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবর দিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
এক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমান এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ফোন করেছিলেন। তবে এই দুই যুবরাজের কেউই বাইডেনের ফোনকলে সাড়া দেননি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ক্রমবর্ধমান তেলের দাম কমানোর জন্যই চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু বাইডেনের এই চেষ্টাকে সমর্থন দিতে নারাজ তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটি।
ইয়েমেন যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের অভাব এবং ইরান পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে পুনরুজ্জীবিত আলোচনার কারণে দুটি পারস্য উপসাগরীয় দেশের সাথে মার্কিন সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
২০১৮ সালে ভিন্নমতাবলম্বি সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগীকে হত্যায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আইনি অনাক্রম্যতার জন্যও চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তা ইরানের বিষয়ে উদ্বেগের মধ্যে তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে দুই দেশের সঙ্গে কাজ করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহ করছে। কারণ কিছু দেশ রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়ে নিরপেক্ষ ছিল।
ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের জন্য বাইডেন প্রশাসনের ক্ষীণ সমর্থন এবং ২০১৫ সালের ইরান চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ভিয়েনায় আলোচনা পারস্য উপসাগরীয় দুটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে খারাপ করেছে।
সৌদি কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ইয়েমেনে তাদের হস্তক্ষেপের জন্য আরও সমর্থন চায় সৌদি আরব। সৌদি আরব তাদের নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতেও সহায়তা চায়।
রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করার কারণে ওয়াশিংটন সম্ভাব্য তেল আলোচনার জন্য ইরান, সৌদি আরব এবং ভেনিজুয়েলার দিকে তাকিয়ে আছে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়ই ঘোষণা করেছে তারা রাশিয়ান নেতৃত্বাধীন পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলির সংস্থার সম্মতির চেয়ে বেশি তেল উৎপাদন করবে না।
মঙ্গলবার বাইডেন রাশিয়ার তেল এবং অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার পর তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩০ ডলারে পৌঁছে গেছে। গত ১৪ বছরের মধ্যে এই দাম সর্বোচ্চ। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পেট্রোলের খুচরা মূল্য সাড়ে ৪ ডলারে পৌঁছেছে। দেশটির ইতিহাসে পেট্রোলের এই দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
বাইডেন বলেছেন, ‘আমরা এই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অনেক ইউরোপীয় মিত্র এবং অংশীদার আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার অবস্থানে নাও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় অভ্যন্তরীণভাবে অনেক বেশি তেল উৎপাদন করে। আসলে আমরা শক্তির নিট রপ্তানিকারক, তাই আমরা এই পদক্ষেপ নিতে পারি।’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম কমিয়ে আনতে আলোচনা করতে ইরান, সৌদি আরব এবং ভেনিজুয়েলার দিকে তাকিয়ে আছে।