চলতি মাসের (মার্চ) শেষের দিকে আরও ৪০ হাজার গৃহহীন পরিবারের কাছে দুর্যোগ সহনীয় ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এ দেশে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, প্রত্যেকের ঠিকানা হবে। সেজন্য দরিদ্র গৃহহীন মানুষকে দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা দিতে বর্তমান সরকার দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ হাজার ৬০৪টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৭ হাজার পাঁচটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ২৯১টি দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করে হস্তান্তর করেছে।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে এক হাজার ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৪০ দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। যেগুলো চলতি মাসের শেষে প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করবেন। আমরা বিভিন্ন জায়গায় এ ঘরগুলো পরিদর্শনে গিয়েছি। আমরা বুঝতে পেরেছি, ঘরগুলো মানুষকে ক্ষমতায়িত করেছে, তাদের সম্মান বাড়িয়েছে। জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করেছে। নারীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগ আঘাত হানছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ দুর্যোগপ্রবণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান পঞ্চম। প্রতিবছর বন্যা, ভূমিধস, বজ্রপাতসহ নানান দুর্যোগ আমরা মোকাবিলা করে থাকি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস। এ মহামারির সময়েও প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে তালিকা করে নিয়মিতভাবে তাদেরকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে সরকার।’
করোনা সংকটে অনেক মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবার দারিদ্রসীমার মধ্যে নেমে এসেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা তাদের জন্য ৩৩৩ নম্বর চালু করেছিলাম, যেটি এখনো চালু আছে। এ নম্বরে ফোন করে যারা খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন, তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
প্রায় ২২ লাখ পরিবার ৩৩৩ নম্বরের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী।
বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে দাবি করে এনামুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষ করেছি। সাড়ে পাঁচশ মুজিব কেল্লা তৈরির কাজ চলমান।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৪৫৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। আরও ১১০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জাপানের সঙ্গে চার দফা বৈঠক হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটি সমঝোতা স্মারক তৈরি হয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনটি ধাপে বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আমরা ফোকাল পার্সন নিয়োগ দিয়েছি, কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রথম দফায় তারা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। দ্বিতীয় দফায় একশ থেকে দুইশ বছরের পুরোনো যে ভবনগুলো আছে। সেগুলো ধ্বংস করে জাপানের আর্থিক সহায়তায় ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে। এরপর যে ভবনগুলো তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোর ভূমিকম্প সহনীয়তা পরীক্ষা সংস্কার করা হবে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেনসহ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।