১৯৯১ সালে Commonwealth of Independent States প্রতিষ্ঠিত হয়। এরকম একটি ধারণা সামনে আসে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত রাষ্ট্রগুলো আলাপ-আলোচনা করে সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি ফেডারেল অথবা কনফেডারেল সত্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়। এই কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছিল রুশ ফেডারেশনভুক্ত তিনটি রাষ্ট্র- যথাক্রমে রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশ। রুশ ফেডারেশনকে স্লাভিক প্রজাতন্ত্র হিসাবেও গণ্য করা হয়।
পরবর্তীকালে এই কমনওয়েলথে আরও কয়েকটি রাষ্ট্র-যথাক্রমে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মলদোভা, তাজিকিস্তান, তুর্কমিনিস্তান ও উজবেকিস্তান যোগদান করে। জর্জিয়া শুরুর দিকে এতে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু কখনো কখনো কমনওয়েলথের সভায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
কমনওয়েলথ সমঝোতার মধ্যে কী ছিল? সমঝোতা হয়েছিল-কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স গঠন করবে। সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনী কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বজায় রাখবে। এই সহযোগিতা একটি অভিন্ন ইউরেশিয়ান বাজার, বিদ্যমান সীমান্ত মেনে নেওয়া এবং জাতি নির্বিশেষে সব নাগরিকদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। এই কাউন্সিল বছরে কমপক্ষে দুবার তাদের সভায় মিলিত হবে। এই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
এটাই ছিল কমনওয়েলথের সর্বোচ্চ সংস্থা। নীতিনির্ধারণের জন্য সমন্বয় করতে সরকারপ্রধানরা আরেকটি সংস্থা গঠন করেছিলেন। এই কমনওয়েলথের প্রধান দপ্তর ছিল বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে।
কমনওয়েলথ গঠিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা গেল কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নানাবিধ দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে এই কমনওয়েলথের টিকে থাকা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল। কী নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছিল? প্রথমত, সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনীকে কিভাবে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে তা নিয়ে। দ্বিতীয়ত, পরস্পরবিরোধী ভূখণ্ডগত দাবি উঠেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল সাবেক সোভিয়েত সম্পদ কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।
সোভিয়েত ঋণের দায়-দেনা কিভাবে নির্ধারিত হবে। একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি কিভাবে অন্য রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব ফেলবে। দুটি সদস্য রাষ্ট্র আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল কিভাবে নগরনো-কারাবাখ রাষ্ট্র দুুটির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
এত কিছুর মধ্যে রাশিয়া ক্রিমিয়ার ওপর তার দাবি ঘোষণা করল এবং ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরে অবস্থিত নৌ-বহরের ওপর দাবি জানাল। এর ফল দাঁড়াল-কমনওয়েলথভুক্ত দুটি প্রধান রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ। আজ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, তার বীজ রোপিত হয়েছিল এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে।
যে সময়ে কমনওয়েলথ গঠিত হয়েছিল, তখন এই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সোভিয়েত আমলের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছিল। এই রাষ্ট্রগুলো তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, মতাদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রশ্নে বিশাল বিরোধ নিয়েই চলছিল। সোভিয়েত আমলে যেসব জাতিগোষ্ঠী নিয়ে সোভিয়েত রাষ্ট্রটি নির্মিত হয়েছিল, এর মধ্যে নিহিত ছিল বিবিধ প্রকারের দ্বন্দ্ব। ইউক্রেনের একটি ভিন্ন নাম আছে। নামটি হলো কিয়েভান রুশ।
এর অবস্থান বর্তমান ইউক্রেনেই। ইউক্রেন পূর্ব স্লাভিক সভ্যতার কেন্দ্রভূমি। এই অবস্থান ইউক্রেন নিতে পেরেছিল নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত।
কিয়েভান রাষ্ট্রটি ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়ে ভেঙে পড়ল ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মোঙ্গল অভিযানের ফলে। এ রাষ্ট্রটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় তিন ধরনের ভিন্ন পরিচয় ধারণ করল। এ পরিবর্তনটি ধীর গতিতেই হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল রুশ, ইউক্রেনিয়ান ও বেলোরুশিয়ান। চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউক্রেনিয়ান ও বেলোরুশিয়ানরা পোলিশ-লিথুনিয়ান কমনওয়েলথের প্রভাব বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়।
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউক্রেনিয়ার কসাকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং তাদের নেতারা মস্কোর জারের আনুগত্য ঘোষণা করে। বিনিময়ে কসাকরা পেল স্বায়ত্তশাসন ও সুরক্ষা।
পরবর্তীকালে স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়া হয় এবং অধিকাংশ ইউক্রেনীয় রুশ নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পশ্চিম ইউক্রেন রুশ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থাকল এবং অস্ট্র-হাঙ্গেরিয়ান শাসনের কবলে অন্তর্ভুক্ত হলো। ১৯৪০ সালে স্ট্যালিন পশ্চিম ইউক্রেন পোল্যান্ডের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। সে সময় ইউক্রেনীয়দের একটি একক রাজনৈতিক পরিচয় প্রদান করা হয়।
১৯১৭ সালে জারের পতন ঘটল এবং সোভিয়েত বিপ্লব সফল হলো। ইউক্রেন পরিণত হলো গৃহযুদ্ধের একটি বড় ময়দানে। একের পর এক ৯টি সরকার ইউক্রেনকে শাসন করার চেষ্টা করল, কিন্তু তারা কোনোরকম সংহত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারল না। রুশ লাল সেনারা ১৯১৯ সালে ইউক্রেনকে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। কৃষিতে যৌথ খামার ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে ইউক্রেন খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধারণা করা হয়, সে সময়ে খাদ্যাভাবে ৫০ লাখ ইউক্রেনিয়ানের মৃত্যু ঘটে। এই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে। শাসক জারই হোক অথবা সোভিয়েতই হোক, ইউক্রেনিয়ানদের সংস্কৃতি পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক চেষ্টা গ্রহণ করে। এমনকি ইউক্রেনীয় ভাষাকে রুশিকরণ করা হয়। ফলে আজকাল অনেক ইউক্রেনবাসী তাদের মাতৃভাষার সঙ্গে পরিচিত নয়। সোভিয়েত শাসনের অধীনে ইউক্রেনীয়দের বলা হতো ‘ছোট ভাই’। সোভিয়েত শাসকরা রুশিকৃত ইউক্রেনিয়ানদের নিজ দলভুক্ত করার প্রয়াস চালায়। এ গোষ্ঠীটি এলিট ইউক্রেনীয় হিসাবে পরিচিতি অর্জন করে এবং তারা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
গরবাচেভের গ্লাসনস্ট ইউক্রেনে বিলম্বেই এসেছিল। তখনকার ইউক্রেনীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ভলদিমির স্কেচারবিতস্কি ছিলেন একজন কট্টরপন্থি কমিউনিস্ট। তিনি গরবাচেভের গ্লাসনস্ট নীতি বাস্তবায়িত হতে দেননি। এই নেতা ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বরে অবসরগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালের মার্চে ইউক্রেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউক্রেনের জনপ্রিয় ফ্রন্ট রুখের ছিল ৬ লাখ ৩০ হাজার সদস্য। এরা পশ্চিম ইউক্রেনের স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে। তাদের জয়ী সদস্য সংখ্যা ছিল ১২৫। কিন্তু রিপাবলিকান সুপ্রিম সোভিয়েতে রুখেরা ৪৫০টি আসনের মধ্যে মাত্র ১২৫ আসন পেয়ে ছিল। ইউক্রেনীয় কমিউনিস্ট পার্টি ২৩৯টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৯০-৯১ সালে ইউক্রেনীয় রাজনীতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। সব প্রজাতন্ত্র জুড়ে মস্কোবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালে সুপ্রিম সোভিয়েত অন্যান্য প্রজাতন্ত্রের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভোট দেয়। সংসদ ইউক্রেনের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের প্রাক্কালে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ভবিষ্যতে নতুন ধরনের কোনো ইউনিয়ন চুক্তিতে তারা শামিল হবে না এবং ইউক্রেনের থাকবে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা। সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর ইউক্রেন সরকার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং এই গণভোটে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উপযুুক্ত ভোটারদের ৯০ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে লিওনিদ ক্রাভচুক ৬২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ইউক্রেনের রাজনীতি আঞ্চলিক, ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীকেন্দ্রিক এবং শ্রেণি বিভাজনভিত্তিক বিভক্তিতে জটিল হয়ে পড়েছিল। পশ্চিম ইউক্রেনে রুখ ছিল শক্তিশালী। এই দলটি ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদের পতাকা বহন করত। এরা ছিল প্রধানত ইউনিয়েট ক্যাথলিক এবং তাদের প্রতিপক্ষ ছিল অর্থডক্স পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় জনগণ। জোসেফ স্ট্যালিন ১৯৪৬ সালে ইউনিয়েট চার্চকে বেআইনি ঘোষণা করেন এবং এরা আত্মগোপন করার পন্থা বেছে নেয়। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তারা আত্মগোপনে ছিল। ইউনিয়েট এবং অর্থডক্সের মধ্যে সম্পর্কটি ছিল সংঘাতধর্মী। মাঝে মাঝেই এই দুই দলের মধ্যে গির্জার সম্পদ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হতো। রুশিয়ানরা জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল। তারা ছিল ২২ শতাংশ। মোট জনসংখ্যা ছিল ৫১.৫ মিলিয়ন। তাদের অবস্থান ছিল দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলে। ক্রিমিয়ার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তারাই ছিল। ১৯৫৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের হাতে তুলে দেয় কিছু রুশ এর প্রতিবাদ করে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিকে তাকিয়ে বলা যায় এই অঞ্চলের জনগণ রুশ কিংবা ইউক্রেনীয় ছিল না। তারা ছিল ক্রিমিয়ান তাতার। এদেরকে স্ট্যালিন মধ্য এশিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করেন। ১৯৮৯ সালের পর তাদের বংশধররা ক্রিমিয়ায় ফিরে আসতে অনুমতি পায়। ইউক্রেনের দনবাস এলাকা ছিল শ্রমিক অসন্তোষের কেন্দ্রভূমি। ১৯৮৯-এর পর সেখানে একাধিকবার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।
ইউক্রেনে এখন যা ঘটছে, তাকে কোনোক্রমেই ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ভাবা যায় না। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো চাইছে ইউক্রেন যেন ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হয়। তাই যদি হয়, তাহলে রাশিয়া কার্যত একটি ভূ-বদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ইউক্রেন হয়ে পড়বে একটি বাফার রাজ্য। ক্রিমিয়ার সেবাস্তোপোল বন্দরটি খুবই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। শীতকালে এর পানি জমে যায় না। সারা বছর ধরে বন্দরটিকে ব্যবহার করা যায়। রাশিয়া বিশাল দেশ। কিন্তু এর একিলেস হিল হলো উষ্ণ সমুদ্রজলের সঙ্গে এর যোগাযোগের ঘাটতি। এদিক থেকে বিবেচনা করলে বলা যায় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিরাপদ নয়। ক্রিমিয়ায় খাবার পানি আসত একটি খালের মধ্য দিয়ে। এই খালের প্রবাহ বন্ধ করে দিলে ক্রিমিয়ার অধিবাসীদের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। রাশিয়া ১৯৯১ সালের পর নতুন করে ওয়ারশ প্যাক্ট পুনরুজ্জীবিত করেনি। পাশ্চাত্য দেশগুলো কথা দিয়েছিল তারা ন্যাটোতে নতুন কোনো সদস্য যোগ করবে না। তারা সেই কথা রাখেনি। পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। ফলে ন্যাটোর বলয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর সঙ্গে রাশিয়ার নিরাপত্তা দুর্বলতর হয়েছে। রাশিয়া চায় ন্যাটোর কার্যকলাপ ও বিস্তৃতি সম্প্রসারিত হয়ে রাশিয়াকে নিরাপত্তার দিক থেকে তা যেন দুর্বল করে ফেলতে না পারে।
প্রথম মহাযুদ্ধের রঙ্গমঞ্চ ছিল ইউরোপ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও রঙ্গমঞ্চ ছিল ইউরোপ। ইউক্রেনের ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে এটুকু বলা যায় যে, ইউরোপ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রঙ্গমঞ্চ হয়ে উঠতে পারে যদি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রনায়করা দায়িত্বশীল আচরণ না করেন। তাদের অবশ্যই একটি সমঝোতায় সম্মান বজায় রেখে পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় বিশ্ব অর্থনীতির স্তম্ভগুলো ভেঙে পড়বে। ইউক্রেন শুধু ইউরোপের শস্যভান্ডার নয়, ইউক্রেন সমগ্র পৃথিবীর শস্যভান্ডার। রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের অবসান না হলে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করার ফলে জ্বালানি সংকট তীব্রতর হবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আমাদের পৃথিবী পরিপূর্ণভাবে যুদ্ধমুক্ত ছিল না। অনেক দেশেই পরাশক্তিগুলো ‘প্রক্সি ওয়ার’ চালু করেছিল। এসব সত্ত্বেও পৃথিবী এগিয়েছে, প্রযুক্তি এগিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে। আমরা কি যুদ্ধ উন্মাদনাকে উৎসাহিত করে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাব? এমন পথ বিশ্ববাসী গ্রহণ করতে পারে না।
ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ