তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে গেলেও বিএনপি ওই সরকার ব্যবস্থার ফের দাবি জানিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ, দলটির নেতৃত্বের সরকার বরাবরই দাবি নাকচ করে বলে আসছে, ‘সরকার সংবিধান থেকে একচুলও নড়বে না।’ পরবর্তী সংসদ নির্বাচন ‘দলনিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে আয়োজনের দাবিতে ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ পথে যেতে চায় বিএনপি। চলতি বছর থেকে সরকারও বিএনপির কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আগের মতো ‘কঠোর অবস্থান’ দেখাচ্ছে না। সামনের নির্বাচন ঘিরে আর্ন্তজাতিক পর্যবেক্ষণ বাড়ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়ন, অনুসন্ধান কমিটি ও ইসি গঠনের আলোচনা অনেকাংশে চাপা পড়েছে। উচ্চমহলের রাজনৈতিক আলোচনায় এখন ঘুরেফিরে বেশি আসছে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে।
আওয়ামী লীগ, সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র মত ও পথকে জানায়, সংবিধানের বাইরে কিছু করতে সম্মত নয় দল ও সরকার। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সরকারের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেনও। বিএনপি অংশ না নিলেও সংবিধানে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে সরে আসবে না সরকার। প্রয়োজনে দশম সংসদ নির্বাচনের মতো বিএনপিকে ছাড়া সরকার ও আওয়ামী লীগ যথাসময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক দলগুলোও চায় সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্বাচন। সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো রূপরেখায় পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে সংসদের বিরোধীদল ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা)।
বিএনপি ‘নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার’ দাবিতে ‘অনড়’। দলটির জোটের কয়েকটি শরিক চায় ‘জাতীয় সরকারের’ অধীনে নির্বাচন। ডান ও বাম ধারার কয়েকটি দলের একই দাবি। বিএনপির মিত্র কয়েকটি দল চায় ‘নির্বাচনকালীন সরকার’। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে নির্বাচন বিষয়ে তাদের ‘কঠোর অবস্থান’ প্রকাশ পাচ্ছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এখনো দুই বছর সময় বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছে।
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পর নির্বাচনের সময় নির্বাচিত, অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সরকার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচনও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকারের অধীনে নির্ধারিত সময়ে আয়োজন হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হয়। নতুন করে ওই সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তর্ক করার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামীতেও তাঁর সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফও মত ও পথের কাছে একই মন্তব্য করেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নয়, নির্বাচনে মানুষ যেন কোনো প্রভাব, হস্তক্ষেপ ছাড়া ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রক্ষমতা এখন অতি ধনী ও সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্বাধীন হয়ে পড়েছে। তারা ইচ্ছামতো কখনো এ দল, কখনো ওই দলকে ক্ষমতায় আসতে নির্বাচনী ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে চলেছে। দেশের মানুষের ভোট দেওয়া এখন তাদের হাতে বন্দী।’ জাসদের সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মত ও পথের সঙ্গে আলাপকালে আগামী নির্বাচন সংবিধানের ভেতরে থেকে আয়োজনে তাঁর দলের সমর্থনের কথা জানান।
কোন ধরনের সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত- তা এখনই ‘স্পষ্ট’ করবে না জাপা। যা সরকারের সঙ্গে দলটির গুটিকয়েক শীর্ষনেতার ‘দরকষাকষির’ কৌশল। চেয়ারম্যান, মহাসচিব ছাড়া অন্যদের সংবাদমাধ্যমে কথা বলায় দলীয় নিষেধাজ্ঞা আছে। জাপার একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চেয়ারম্যান জিএম কাদের দশম সংসদ নির্বাচন ‘বর্জন’ করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে সরকারের কিছুটা ‘সংশয়’ থাকলেও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগের সমর্থনে এ পদে এসেছেন। রাজনৈতিক সমীকরণে অদল-বদল না হলে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন যে ব্যবস্থা, বা পদ্ধতিতে আয়োজন করবে, তাতেই সমর্থন করবে জাপা।