সমকালীন বিশ্বনেতাদের মূল্যায়নে বঙ্গবন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

বিশ্বনেতারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মূল্যায়ন করে বলেছেন, তিনি শুধু বাংলাদেশের নেতাই ছিলেন না, ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁকে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ।

বঙ্গবন্ধুকে এভাবে যাঁরা স্বীকৃতি দিয়েছেন, সম্মান দেখিয়েছেন বা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন, তাঁদের কেউই এ দেশের নাগরিক নন। তাঁরা বিভিন্ন দেশের বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অথবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বাংলাদেশ সফরে এসে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দেখার পর তাঁরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নিজের হাতে মন্তব্য লিখেছেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনে করেন, এই স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন তাঁর জন্য বড় সম্মান ও বিরল সুযোগ। বঙ্গবন্ধুকে বড় মাপের নেতা আখ্যা দিয়ে ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ৬ জুন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি। মোদির মূল্যায়ন হচ্ছে, একজন বড় মানবতাবাদী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সব মানুষের সমতা ও সুযোগের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চির অটুট বন্ধনে বঙ্গবন্ধুর যে লক্ষ্য ছিল, তা উপলব্ধি করার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বঙ্গবন্ধুকে সাহসী নেতা আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘আই স্যালুট দ্য ব্রেভ লিডার অব অল টাইমস।’ একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মদাতাকে এভাবে হত্যা করায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। প্রণব লিখেছেন, এই বাড়ি থেকে শেখ মুজিব বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে নেতৃত্ব দেন এবং এই বাড়িতেই তাঁকে হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।

২০১৮ সালের ১৫ জুলাই ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্তব্য করেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে স্মরণ করা হবে।

মন্তব্য বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে চিঠি লিখেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল জাদুঘর পরিদর্শনের পর তিনি লিখেন, ‘প্রিয় শেখ মুজিব, মানুষ বলে তুমি মৃত। কিন্তু আমি অনুভব করি তুমি আজও আমাদের চারপাশে। আমি খুশির সঙ্গে জানাতে চাই যে তোমার স্বপ্ন আজ তোমার মেয়ে শেখ হাসিনার দ্বারা পূরণ হয়েছে। তুমি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছ। তুমি কেবল বঙ্গবন্ধু নও, ভুটানেরও বন্ধু।’

জাদুঘর পরিদর্শনের পর ভুটানের কুইন মাদার বা রাজমাতা শেরিং পেম ওয়াংচুক মন্তব্য করেন, খুবই চমৎকার। একজন মহান ও দূরদর্শী নেতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভুটানের সাবেক রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুকের তৃতীয় স্ত্রী শেরিং পেম ওয়াংচুক এখানে আসেন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বঙ্গবন্ধুকে এই অঞ্চলের মহান নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর ত্যাগ বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে যাবে। এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পূরণের অংশীদার হতে পেরে শ্রীলঙ্কা গর্বিত। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি।

চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা ১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ঘুরে দেখে তিনি লিখে গেছেন, এ এক গভীর মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা। এমন একজন মহৎ মানুষকে নিছক বুলেটবিদ্ধ করে হত্যা করা হলো। তবে তাঁর অর্জনের স্মৃতি এ দেশে বেঁচে থাকবে। তাঁর অনুসারী এবং কন্যা যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উচ্চতায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে সক্ষম হন, এমন প্রত্যাশা রেখে গেছেন চন্দ্রিকা।

শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংসদের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া এসেছিলেন ২০১৬ সালের ৪ জুন। জাতির জনকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, পরবর্তী প্রজন্ম চিরতরে তাঁর নাম স্মরণ করবে।

বিশ্বনেতাদের অনেকেই নিজের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। জাপানি, চীনা, আরবি, হিন্দি, উর্দুসহ নানা ভাষায় তাঁরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো তারো জাপানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গেছেন। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট, কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মিসরের শিক্ষামন্ত্রী, নাইজেরিয়ার শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁদের অনুভূতির কথা লিখে গেছেন।

শেয়ার করুন