বঙ্গবন্ধুর সংস্কৃতি ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলছে মার্চ মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মমাস। মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার জন্যে মুক্তিযুদ্ধের মাস। স্বাধীনতার পর দেশের দুরবস্থার সময় বঙ্গবন্ধু বাঙালির সাংস্কৃতিক উন্নয়নে যে চিন্তা করেছিলেন, তা ছিল অকল্পনীয়। দেশের চারুশিল্পী, কারুশিল্পীদের ব্যাপারে তিনি ভেবেছিলেন। রবীন্দ্র ও নজরুলের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ অনুরাগ। তিনি ছিলেন সাহিত্য সচেতন। তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বহুদূর।

বাঙালির অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি চেতনা বঙ্গবন্ধুর মর্মে স্থান পেয়েছিল তাঁর জীবনাভিজ্ঞতা থেকে। তিনি যে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছিলেন, সেখানে অসাম্প্রদায়িকতা ছিল সমাজধর্মের অংশ। অসাম্প্রদায়িকতা ও স্বাদেশিকতার দীক্ষা দুই-ই বঙ্গবন্ধু লাভ করেছিলেন বাল্য ও কৈশোরে বাংলার জল-মাটি-মানুষের সম্পৃক্ততায়। তাঁর পরবর্তী জীবনধারায় এর অনন্য প্রকাশ দেখা যায়।

বাঙালি সংস্কৃতির যে স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা, যার রূপকার জাতির পিতা শেখ মুজিব, সেই ইতিহাসের শিক্ষা নিয়েই জাতিকে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও মহৎ আত্মদান জাতির অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস।

বাস্তবতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সংস্কৃতিভাবনা নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় অগ্রসর হয় শেখ মুজিবের আন্দোলন। তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন পাকিস্তানি সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে। ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার নানা ষড়যন্ত্রজাল তিনি রুখে দাঁড়ান।

বাঙালি জাতির শিকড় হচ্ছে এর সংস্কৃতি। বাংলা সংস্কৃতির মূলে রয়েছে ভাষা। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী থাকাকালে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনের ২১ দফার কাজ এগিয়ে নেন। এ সময় ‘বঙ্গ সংস্কৃতির অগ্রদূত’ উপাধি পান তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির প্রায় সবকিছুই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শুরু হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রধান গুণ ছিল নান্দনিক ও রূপান্তরমূলক। তিনি দেখতেও যেমন ছিলেন নান্দনিক, তেমনই চলনে-বলনে, আচার-ব্যবহারেও সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি। অন্যের প্রতি অপরিসীম মায়া-ভালোবাসাই ছিল তাঁর নান্দনিক গুণের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যারা তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসেন, তাদের মনে ওই অপরূপ পুরুষের সৌন্দর্যের ছবিটি আঁকা।

এই ছবি বাঙালি জাতির সব আশা-আকাক্সক্ষা-স্বপ্নের প্রতীক। তিনি শুধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক, স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা নন- বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদের ধারণাই গড়ে উঠেছে তাঁর অবয়বে, মানসলোকের প্রতিচ্ছায়ায়।

শেয়ার করুন