মেডিকেল ভর্তিতে রেকর্ড আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা
ফাইল ছবি

পুরোদমে এগিয়ে চলেছে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এমবিবিএস (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের) প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ইতিহাসে এ বছর রেকর্ডসংখ্যক ভর্তিচ্ছু অংশ নিতে যাচ্ছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন ও ১৬ মার্চ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ফি জমা দেওয়ার শেষ সময়।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর (চিকিৎসাশিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখা) সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মার্চ পর্যন্ত মোট এক লাখ ৪২ হাজার ৯১৬টি আবেদন জমা পড়েছে। আগামীকাল পর্যন্ত এক লাখ ৪৫ হাজার আবেদন জমা পড়তে পারে।

গত বছর রাজধানীসহ সারাদেশের ১৯টি কেন্দ্রের ৫৫টি ভেন্যুতে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের (২০২০-২১) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন এক লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন। তবে পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৮৫৬ জন। কেন্দ্র ১৯টি হলেও এ বছর পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে।

অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব সোমবার (১৪ মার্চ) বিকেলে বলেন, আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সার্বিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামীকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে আজ সোমবার (১৪ মার্চ) জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বছর ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নাকি পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব বলেন, এখনও পর্যন্ত গত বছরের মতো পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কেন হবে না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত পেতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন অভিভাবক উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রিট আবেদনে বলা হয়, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলে অন্যান্য বিষয়ে তারা পড়াশুনা করেননি। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা নিলে এ বছর যে সকল শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বারের মতো ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা সারাবছর প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে পড়াশুনা করতে পেরেছেন। ফলে সম্প্রতি পাস করা শিক্ষার্থীরা তাদের চেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পিছিয়ে যাবেন। রিট মামলাটি এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য দেশের বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে একটি ভর্তি পরীক্ষা কমিটি রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত নাকি পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে হবে সে বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে।

তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে বিশেষ করে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা বেশি আগ্রহী থাকে। সরকারি মেডিকেলে আসন সংখ্যা চার হাজারের কিছু বেশি। প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় যে সকল মেধাবী শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশুনা করে তারাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উঠে আসে।

করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়নি, অন্যদিকে দ্বিতীয়বারের মতো যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা বেশি সময় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এমনটা কেন- এ প্রশ্নের জবাবে আবু ইউসুফ ফকির বলেন, পূর্ববর্তী বছরের এইচএসসি পাস প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর কেটে নেওয়া হয়। ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় ৫ নম্বর কেটে নেওয়া কম নয়।

তিনি বলেন, করোনার কারণে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার ও আগামীতেও একই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে আদালত থেকে ভিন্ন নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মোট ১০৭টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এতে মোট আসন ১০ হাজার ৬৯৭টি। তার মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন চার হাজার ৩৫০টি এবং বেসরকারি ৭০টি মেডিকেল কলেজে আসন ছয় হাজার ৩৪৭টি।

অধিদপ্তর প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুসারে, গত বছরের মতো এবারও ১০০ নম্বরের ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। প্রতিটির প্রশ্নের মান ১। এমসিকিউ পরীক্ষা হবে ১ ঘণ্টায়। পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নে ২৫, জীববিজ্ঞানে ৩০, ইংরেজিতে ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান, বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১০ নম্বর (মোট ১০০) থাকবে।

লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে। এর কম পেলে অকৃতকার্য বলে বিবেচিত হবেন। কেবল কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মেধাতালিকাসহ ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ২০০ নম্বর হিসেবে নির্ধারণ করে মূল্যায়ন করা হবে। লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে।

শেয়ার করুন