ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেল দলটি। তাও আবার শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে। আজ সোমবার পাকিস্তানকে ৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
হ্যামিল্টনে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হয় ম্যাচটি। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ডই গড়ে ফেলে বাংলাদেশ নারীরা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রানের সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মেয়েরা, যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশ নারী দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ৯ উইকেটে ২১১ রান করেছিলেন টাইগ্রেসরা। সেটি টপকে আজ ২৩৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
২৩৫ রানের তাড়ায় সালমা-রোমানাদের তোপে ৯ উইকেটে ২২৫ রানে থাকে পাকিস্তানের ইনিংস। বিফলে গেল পাক ওপেনার সিদ্রা আমিনের সেঞ্চুরি। রানআউট হওয়ার আগে ১৪০ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ১০৪ রান করেন এই পাক ওপেনার।
দারুণ খেলেছেন অপর ওপেনার নাহিদা খানও। ৬৭ বলে ৪৩ রান করেন। এরপর অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ ৩১ রান করে জাহানারার বলে আউট হলে পাক ব্যাটারদের আর কেউ দাঁড়াতে পারেনি।
টপঅর্ডারের তিন ব্যাটারের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, এবারও হারের তেতো স্বাদ নিয়ে ফিরতে হবে সালমা খাতুনদের। কিন্তু না; পাকিস্তানের পক্ষে থাকা গোটা ম্যাচটাই ঘুরিয়ে বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন বোলার ফাহিমা খাতুন।
৮ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে শিকার করেন ৩টি উইকেট। উমাইমা সুহাইলকে ১০ রানে ফেরানোর পর আলিয়া রিয়াজ ও ফাতিমা সানাকে রানের খাতা খুলতেই দেননি তিনি। দুজনকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে শূন্যরানে সাজঘরে ফেরালে ম্যাচভাগ্য ঘুরে বাংলাদেশের পক্ষে চলে আসে।
শেষ দিকে টেলএন্ডাররা চেষ্টা করলেও জয়ের বন্দরে পৌঁছুতে পারেননি। সালমা খাতুনের বলে ১২ রানে দিয়ানা বেগ এলবিডব্লিউ হলে ২২৫ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান।
বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ফাহিমা খাতুন, ৩৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট। ২টি উইকেট শিকার করেছেন রুমানা আহমেদ, একটি করে পেয়েছেন সালমা খাতুন ও জাহানারা। এর আগে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন ফারজানা হক পিংকি, শারমিন আক্তার সুপ্তা ও নিগার সুলতানা জ্যোতি। নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি হাঁকিয়েছেন ফারজানা পিংকি।
উদ্বোধনী জুটিতে ভালো সূচনা এনে দেন শামীমা সুলতানা ও শারমিন সুপ্তা। দলীয় ৩৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট হন শামীমা। এর পর ৪২ রানের জুটি গড়েন সুপ্তা ও পিংকি।
ব্যক্তিগত ৪৪ রানে উমাইমা সোহেলের বলে বোল্ড হয়ে নিজের উইকেট হারান সুপ্তা। তার ৫৫ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার। তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রান যোগ করেন পিংকি ও জ্যোতি। সুপ্তার মতো জ্যোতিও আটকা পড়েন ফিফটির খুব কাছে গিয়ে। তার ৬৪ বলে ৪৬ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে ফাতিমা সানার বলে লেগ বিফোরে কাটা পড়ে।
সুপ্তা ও জ্যোতি সুযোগ হাতছাড়া করলেও কোনো ভুল করেননি ফারজানা পিংকি। আগের ম্যাচে ৫২ রান করা পিংকি এই ম্যাচেও তুলে নেন ফিফটি, যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবমবার ৫০ ছোঁয়ার ঘটনা। তার ব্যাটে ভর করেই ২০০ পেরোয় বাংলাদেশের সংগ্রহ।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারে পর পর দুই বলে আউট হন ফারজানা পিংকি ও ফাহিমা খাতুন। দুটি আউটেই রিভিউ নিয়ে সফল হয় পাকিস্তান। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে ১১৫ বলে ৫ চারের মারে ৭১ রান করেন পিংকি।
মাঝে ১৩ বলে ১৬ রানের ক্যামিও খেলেন তারকা অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ। শেষ দিকে রিতু মণি ১৩ বলে ১১ ও সালমা খাতুন ১০ বলে ১১ রান করলে ২৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ। শেষ ১২ ওভারে মাত্র দুটি বাউন্ডারি হাঁকাতে পেরেছেন টাইগ্রেসরা।
পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন নাশরা সিন্ধু। এ ছাড়া নিদা দার, ফাতিমা সানা ও উমাইমা সোহেলের শিকার ১টি করে উইকেট।