হরতালে বিএনপির ‘সহায়তার’ ঘোষণায় যে কারণে ‘বিব্রত’ বামজোট

হাসান শান্তনু

হরতাল

আগামী ২৮ মার্চের হরতালে বিএনপির ‘সমর্থন, সহায়তা’ দেওয়ায় ঘোষণায় বাম গণতান্ত্রিক জোট ‘বিব্রত’ বোধ করছে। এতে বামজোটের কর্মসূচি ঘিরে ‘বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে’ বলে আশঙ্কা করছে তারা। বিএনপির জোটে বিতর্কিত রাজনৈতিক দল জামায়াত থাকায় বামনেতাদের শঙ্কার অন্যতম কারণ।

বামজোটের নেতাদের মতে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন হারানো জামায়াত ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দল। চলতি বছর থেকে বামজোট নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। ভোটের মাঠে যেসব ইস্যু নিয়ে থাকবে তারা, সেগুলোর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কর্মসূচি থাকবে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালনে আরেকটি সাম্প্রদায়িক দলের সমর্থন চায় না জোট। তারা চায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বিকল্প গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ক্ষমতায় যেতে।

universel cardiac hospital

বামজোটের অন্যতম শরিক সিপিবির সভাপতি শাহ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ২৮ মার্চ হরতাল ডেকেছি। বিএনপির সমর্থন আমরা চাইনি। তার রাজনীতি সে করুক। তার কোমরে জোর থাকলে সে আলাদা করুক। বিএনপি হরতালে সমর্থন দিয়েছে। বিএনপি কি মুক্তবাজারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? রেশনশিপ চালু করার পক্ষে থাকবে? গণবণ্টন ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সরকারীকরণের পক্ষে সে থাকবে? বিএনপি নিজেই মুক্তবাজারপন্থি।’

সিপিবির শীর্ষপদে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া এ নেতা বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিকে যাঁরা ভণ্ডুল করতে চাচ্ছেন, তাদের হুঁশিয়ার করতে চাই। এ নিয়ে মাঠে নেমেছি। গোটা বাংলাদেশে আমাদের দল নেমে গেছে। মাঠে আছি, থাকব। আমাদেরকে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’

‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ ও মানুষ বাঁচানোর দাবিতে’ সারাদেশে ২৮ মার্চ আধাবেলা হরতালের ডাক দেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট। ওই দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি পালন হবে। গত ১১ মার্চ এ কর্মসূচি ঘোষণা করে জোট। এর পরের বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান হরতালে দলটির সহায়তার ঘোষণা দেন। এ হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেয় ন্যাপ। এ ছাড়া একই দিনে হরতাল ডেকেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়। শুরুতে জোটে আটটি দল ছিল। দলগুলো হলো- সিপিবিসহ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লিগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।

২০১৯ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে একটা অংশ বেরিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্ক্সবাদী) নামে নতুন দল করে। এ দলও পরে জোটে যুক্ত হয়। জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে শুধু তিনটির- সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ইসির নিবন্ধন রয়েছে। ১৯৯৬ সালের পর এ জোটের শরিক কোনো দল থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। ১৯৯১ সালে সিপিবির পাঁচজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শেয়ার করুন