ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়াতে মস্কোকে সহায়তা করলে চীনকে ‘অবশ্যই’ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে চলমান হামলার মধ্যেই মস্কো চীনের কাছে অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা চেয়েছে বলে খবর সামনে আসার পর এই মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।
সোমবার (১৪ মার্চ) ইতালির রাজধানী রোমে চীনা পররাষ্ট্র নীতির শীর্ষ কর্মকর্তা ইয়াং জিচির সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে জ্যাক সুলিভানের। বৈঠকের ঠিক আগমুহূর্তে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন তিনি। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এর আগে চীনের কাছে রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সহায়তা চাওয়ার এই খবরটি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, রাশিয়া চায় ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করুক চীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের শুরু থেকেই চীনা সরঞ্জামের জন্য বেইজিংকে অনুরোধ করে আসছে রাশিয়া। অবশ্য রুশ কর্মকর্তারা চীনের কাছে ঠিক কী ধরনের সরঞ্জাম চাইছেন তা উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মস্কোর অনুরোধের পর চীন সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি পৃথক প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রশমিত করার জন্য বেইজিংয়ের কাছে অর্থনৈতিক সহায়তাও চাইছে মস্কো।
চীন এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে এবং পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেটির নিন্দাও প্রকাশ করেনি বেইজিং।
রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে জ্যাক সুলিভান বলেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর আগে থেকে মস্কোর পরিকল্পনার বিষয়ে চীন সচেতন ছিল বলে বিশ্বাস করে ওয়াশিংটন। যদিও বেইজিং হয়তো রাশিয়ার পুরো পরিকল্পনাটি হয়তো বুঝতে পারেনি।
সুলিভান আরও বলেন, বেইজিং রাশিয়াকে ঠিক কতটা অর্থনৈতিক বা অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে কি না সেটি ওয়াশিংটন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তেন কিছু ঘটলে (চীনের বিরুদ্ধে) পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভাষায়, ‘আমরা বেইজিংয়ের সাথে সরাসরি এবং ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখছি, বৃহৎ আকারের নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়ার প্রচেষ্টা বা রাশিয়াকে সহায়তার জন্য বেইজিংকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা এমনটি হতে দেব না এবং এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়াতে বিশ্বের কোনো দেশ থেকেই রাশিয়াকে সহায়তা পেতে দেওয়া হবে না।’
এদিকে বেইজংয়ের কাছে রাশিয়ার সামরিক সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেনে, ‘আমি কখনোই এ ব্যাপারে কিছু শুনিনি।’
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিকে চীন ‘অস্বস্তিকর’ বলে মনে করেছে। তার ভাষায়, ‘আমরা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সহায়ক সকল প্রচেষ্টাকে সমর্থন এবং উৎসাহিত করি।’
লিউ বলেন, ‘সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আলোচনা এগিয়ে নিয়ে নিতে রাশিয়া-ইউক্রেনকে সমর্থন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত।’