‘আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ থাকবে ১৪ দল’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

আগামী সংসদ নির্বাচন ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি বলেছেন, ১৪ দলের সঙ্গে ঐক্য বজায় থাকবে। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে ১৪ দলের যে ভূমিকা সেটিও অব্যাহত থাকবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ তথ্য জানান আমু। তিন বছর পর এই সভা হয়।

নির্বাচনে আসন বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, এখনই আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে না। এজন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন। এটি অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচন এক সঙ্গে হবে। এ আলোচনা নির্বাচন ঘোষণার পরে হবে।

বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তখন কি জোটবদ্ধ নির্বাচন হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা তারা বলছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী করবে এটা দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

বিএনপির দেশব্যাপী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে নামবে জানিয়ে আমু বলেন, বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে নামবে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগকে যে নির্দেশনা দেবে। সারা দেশে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ শুরু করা হবে।

১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম ও ভূমিকার প্রশংসা করেছে ১৪ দল। সারা বিশ্বে করোনার এই সময়ে সারাদেশের মানুষের টিকা দেওয়া, করোনা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছে। শ্রমিকসহ সকল শ্রেণির মানুষকে যেভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এ জন্য তার প্রশংসা করা হয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য, বর্তমান পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য সবই আলোচনা হয়েছে। খুবই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। বহুদিন পরে আমরা একটা ভালো আলোচনা হয়েছে।

আমরা বলেছি সরকারের সঙ্গে ১৪ দলের সম্পর্কে যে প্রশ্নটা আছে, সেটাও আপনার নির্মূল করতে হবে। কারণ সব ব্যাপারে আমরা একমত নই। সুতরাং যেখানে যেটা আছে, সেখানে কোনো ব্যত্যয় থাকলে, বিষয়টি আলোচনায় আসে।

নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে কি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ওই বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, সেটা আমরা জানি।

আপনি যে বিভিন্ন সময় জনগণের ভোটের নিশ্চয়তা দাবি করেছিলেন, সেই বিষয়ে আজকে কী আলোচনা করেছেন, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মেনন বলেন, একাবারে স্পষ্টতভাবে বলেছি গত ইউপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো এসেছে, জনগণের ভোটদানের অধিকারের যে প্রশ্নটি এসেছে। এই ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

জোট নেত্রী কি বলেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, নেত্রী কি সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন?

ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যূতে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক নীতি অবলম্বনকে সমর্থন করেছেন বলে জানিয়েছেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি এটা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন না, সামগ্রিক।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারি দলের কাছে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনাটা হয়ে ১৪ দলীয় জোট প্রসঙ্গে। আমরা মূলত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটি ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো রাষ্ট্রের চিরশত্রু, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী এবং সন্ত্রাসী শক্তি রাষ্ট্রের মূলভিত্তিতে হামলা ও আঘাত করছে। আমরা তাই মনে করি এখনো ১৪ দল রাখার প্রয়োজন রয়েছে। একইভাবে জোটকে মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে কার্যকর করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম যেন না বৃদ্ধি না করা হয়, সেই বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছে।

দূর্গাপূজা ও সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতরা যেন কোন অবস্থায়ে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ছাড় না পায় এবং দ্রুত বিচারের সম্মুখীন হয়। এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে জানান ইনু। বলেন, তবে ১৪ দলকে কার্যকর করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি এই আলোচনার ধারাই নির্বাচন এখনো অনেক দুরে আছে, পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে বলেছেন নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বপ্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপি সম্পর্কে বলেছেন, তারা একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাধীনতা বিরোধী চক্র জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ। তাই তিনি চান আওয়ামী লীগের বিকল্প একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হোক। সেটি ১৪ দলভুক্ত, আমাদের রাজনৈতিক মূল ভিত্তি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীনতার পক্ষের চেতনা। সুতারাং সেই শক্তির থেকে আরেকটি বিকল্প শক্তির উত্থান হোক সেটাই ওনার প্রত্যাশা।

সেইভাবে তিনি ১৪ দলীয় জোট ভুক্ত দলগুলোকে যার যার দলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করবার তাগিদ দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে হওয়া ঐক্যজোটের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন