মৃৎশিল্প বাঁচাতে হবে

শেখ একেএম জাকারিয়া

মৃৎশিল্প
ফাইল ছবি

হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিক তৈজসপত্রের ভিড়ে মাটির তৈরি জিনিস হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে সংকটে রয়েছেন দেশের মৃৎশিল্পীরা। একটা সময় শীত-বসন্তে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ত সময় কাটত।

তাদের সেই ব্যস্ততা এখন আর নেই। মফস্বল কিংবা জেলা শহরের বাজারে সারি সারি মাটির তৈজসপত্র তেমন একটা চোখে পড়ে না। মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। আধুনিক পণ্যের আধিক্যে মার খাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

universel cardiac hospital

এখনো অল্পসংখ্যক মৃৎশিল্পী বংশপরম্পরায় এ শিল্পকে কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, মাটির তৈজসপত্র বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বের হওয়ায় মাটির তৈজসপত্র আর চলে না। আগে মাটির তৈজসপত্র ভালোই চলত। কয়েক বছর আগেও তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যেত। সারাদিন কাজ করত, হাট-বাজারে গিয়ে দুই-চার হাজার টাকার মাটির তৈজসপত্র বিক্রি করত। এখন আর আগের সেই চাহিদা নেই। বেচাকেনা না হওয়ায় তাদের পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। তারা জানান, দধির পাতিল আর টয়লেটের পাট এখনো কিছুটা চলে।

দধির পাতিল ও টয়লেটের পাটের চাহিদা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তাদের সংসার চালানো খুব কষ্টের হবে। সংসার চালাতে না পেরে ইতোমধ্যে অনেকেই অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।

অতীতে মৃৎশিল্পীরা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে শুকনা খড়, লাকড়ি, মাটি, বালি ও পানির সাহায্যে দধির পাত্র, পিঠাখোলা, ভাতের পাতিল, পাতিলের ঢাকনা, তরকারির কড়াই, রসের হাঁড়ি, ধূপ জ্বালানি পাত্র, মুড়ির পাতিল, বাতি জ্বালানির পাত্র, জলকান্দা, শিশুদের জন্য নানা ধরনের মাটির তৈরি খেলনা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করত। এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না।

মৃৎশিল্প শুধু একটি শিল্প নয়, আবহমান বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে এ শিল্পের বিভিন্ন পণ্য। নান্দনিক ও বাহারি কারুকার্যের কারণে বহির্বিশ্বে এ দেশের মৃৎশিল্পের কদর রয়েছে। কাজেই দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাতে দেশের বাইরে মাটির তৈরি পণ্য রপ্তানি করা যায়, সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার এবং পালদের সহজ শর্তে ঋণ ও অন্যান্য সুবিধাদানের মাধ্যমে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই দেশীয় শিল্পের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : সভাপতি, সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদ

শেয়ার করুন