স্বাধীনতা পদকের তালিকা থেকে বাদ পড়বেন আমির হামজা?

হাসান শান্তনু

এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক পাওয়া মো. আমির হামজার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। প্রাধান্য পেতে পারে ‘জনমত’। বিতর্কের জের ধরে স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র আজ বুধবার মত ও পথকে এসব তথ্য জানায়।

গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পুরস্কারের তালিকা ঘোষণার পর থেকে আমির হামজার সাহিত্য বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে। মূলধারার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অনলাইনকেন্দ্রিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দেশের বিশিষ্ট লেখকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। কোন বিবেচনায় তাঁকে সাহিত্যে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে- এ প্রশ্ন তুলে তাঁরা পদক নীতিমালায় পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকতা বুধবার বিকেলে মত ও পথকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘২০২০ সালে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হিসেবে সরকারি কর্মকতা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের নাম ঘোষণা করলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। পরে জনমত গুরুত্ব দিয়ে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যে নাম ঘোষণা করে, এতে রইজসহ মোট নয় ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল। ১২ মার্চ প্রকাশিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশোধিত তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ে। চলতি বছরের তালিকায়ও এমনটা ঘটতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

আমির হামজার মেজ ছেলে ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বাবার পুরস্কার পাওয়ার ‘মানদণ্ড’ দাবি করছেন, ‘তাঁর (হামজা) বাবা ভালো লিখতেন। তাঁর বই প্রচুর বিক্রি হয়।’ ২০২০ সালে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হিসেবে সরকারি কর্মকতা রইজ উদ্দিন আহম্মদের নাম ঘোষণা করলে একইভাবে বিতর্কের ঝড় ওঠে। তখন তিনিও দাবি করেন, ‘তাঁর বই বিক্রি হয়।’

বই বিক্রির সংখ্যা দিয়ে সাহিত্যের মূল্যমান বিচার হয় কী না- এ প্রশ্ন তখন ওঠে। আমির হামজা, রইজ উদ্দিনের বই কতো কপি, কীভাবে বিক্রি হয়, এর অনুসন্ধানে জানা গেছে ‘চমকপ্রদ’ তথ্য।

২০১৭ সালে এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে- ‘ইসলামিক রোমান্স নোভেলস সেট হার্টস অ্যাফ্লুটার ইন বাংলাদেশ’। এতে দাবি করা হয়, কাসেম বিন আবুবাকার নামের এক ‘ঔপন্যাসিকের’ বই দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এএফপির ওই প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়াহু নিউজ’, যুক্তরাজ্যের ‘ডেইলি মেইল’, মধ্যপ্রাচ্যের ‘আরব নিউজ’, মালয়েশিয়ার ‘স্টার’, ‘মালয় মেইল’, পাকিস্তানের ‘ডন’, ফ্রান্সের ‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’ ও ‘রেডিও ফ্রান্স’, হাঙ্গেরির ‘হাঙ্গেরি টুডে’সহ বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে পুন:প্রচারিত হয়। দেশে-বিদেশে তাঁকে নিয়ে হৈ-চৈ শুরু হয়।

সাহিত্যবোদ্ধারা তখন বলেন, কাসেম বিন আবুবাকারের বই একসময় বিক্রি হলেও সেগুলো মানহীন। সস্তা ছাপানো। বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা তাঁর বই পড়লেও সেগুলোর সাহিত্যমর্যাদা নেই। দেশের মানসম্মত জাতীয় কোনো পত্রিকায় তাঁর লেখা কখনো ছাপা হয়নি। বই কম-বেশি বিক্রির ওপর সাহিত্যের মান নির্ভর করে না।

চলতি বছরের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় নাম থাকা
আমির হামজার দুটি বই আছে। ‘বাঘের থাবা’ ও ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’। প্রকাশিত হয় ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। তিনি ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি মারা যান। নিজের লেখা ‘বাঘের থাবা’ শিরোনামের বইটি তিনি দেখে যেতে পেরেছেন। অন্যটি প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর পর। ‘বাঘের থাবা’র প্রকাশক ছিল মাগুরার শ্রীপুরের সারথি ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বইটির মুদ্রণ ব্যবস্থাপনায় ছিল ঝিনাইদহের বেগবতী প্রকাশনী।

প্রকাশনার কালে আমির হামজার ছেলে আসাদুজ্জামান ছিলেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। অভিযোগ আছে, প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বাবার বই প্রকাশ, বিক্রি করান তিনি। তিনিই বাবার পুরস্কারের জন্য আবেদন, তদ্বির করেন।

শেয়ার করুন