সন্তানদের অসাম্প্রদায়িক মানবিক শিশু হিসেবে গড়ে তুলতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, কখনো কখনো অসহিষ্ণুতা, উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এটি কোনোক্রমে কাম্য নয়, এটিকে ইসলাম সমর্থন করে না, মানবতা সমর্থন করে না। এটিই ইসলামের শিক্ষা।
আজ শনিবার সকালে চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজ প্রাঙ্গণে ‘চিনাইর শিশু মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের’ আয়োজনে ১৭তম শিশু মেধাবৃত্তি ও শিশুমেলা এবং কৃতিসন্তান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাবি উপাচার্য।
এ সময় তিনি বলেন, আমাদের ইসলাম সবচেয়ে গণতান্ত্রিক, সবচেয়ে মানবতাবাদী। সেটির মূল কারণ হলো ইসলামের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে পূর্ববর্তী ধর্মসমূহকে সম্মান প্রদর্শন করা।
ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোনো জায়গা নেই। ইসলাম হলো সম্প্রীতির, মানবতার। এ বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। যারা অভিভাবক আছেন, তারা শিক্ষার্থীদের বোঝাবেন। কারণ, শিশুরা হচ্ছে নিষ্পাপ, সবচেয়ে উদার ও মানবিক। তাদেরকে আরও অসাম্প্রদায়িক মানবিক শিশু হিসেবে গড়ে তুলতে আপনাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, চিনাইর শিশু মেধা বৃত্তি ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
এ সময় উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম তারা আর বেশিদিন থাকব না। আমরা চলে যাওয়ার পর যারা এই পৃথিবীতে থাকবে তারা এখন শিশু। তোমরা শিশুরাই একদিন এই বাংলাদেশকে সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ২০০৪ সালে আমার যখন কোনো চাকরি ছিল না এবং আমার স্ত্রীকে যখন ঢাকা থেকে বিতারিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসার সুযোগ করে দিয়েছিল তখন আমরা চিনাইর শিশু মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনটি গঠন করেছিলাম। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আজকে যে কাজটি আমরা করছি, সে কাজটি করার জন্য সেদিন যারা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়াসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ব্যক্তিদেরকেও আমি ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, দেশ পরিচালনা মানে শুধু রাজনীতি নয়, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, শিক্ষার ক্ষেত্রে, তথা সর্বক্ষেত্রে যাতে তোমরা নেতৃত্ব দিতে পারো, সেভাবে যেন তোমরা গড়ে উঠতে পারো সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্যই এখন পর্যন্ত এই মঞ্চে আমি ছাড়া আর কোনো রাজনীতিবিদকে আনিনি। আমি এখানে বড় বড় শিক্ষাবিদদের নিয়ে আসি। আমি তোমাদের জন্য প্রার্থনা করি, তোমরা যেন একজন আখতারুজ্জামান হয়ে উঠো, তোমরা প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের মতো হয়ে উঠো, তোমারা একদিন যেন শেখ মুজিবের মতো হয়ে উঠো, তোমরা শেখ হাসিনার মতো গড়ে উঠো এটি আমি চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতিসন্তান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়া বেলাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে ট্যালেন্টপুলে ৪৮ জন শিক্ষার্থীকে তিন হাজার টাকা এবং জেনারেল গ্রেডে ৯২ জন শিক্ষার্থীকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা কোটা বৃত্তি হিসেবে ২৪ জন শিক্ষার্থীকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হবে।
এ বছর জেলার ৬৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ১ হাজার ৪২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠান চলাকালে মোকতাদির চৌধুরী এমপি’র কাছে সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুর সংবাদ এলে প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সম্মানে তিনি সবাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।