ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের নির্বাচন। একে ঘিরে প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের কার্যালয়ে ছুটছেন তাঁরা। দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায়, রাতে। নিজের পরিষদের (প্যানেল) প্রার্থী, পেশায় শুভাকাঙ্ক্ষীরা মিলে ভোটদাতার কাছে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমেও সরব তাঁরা। ভোটদাতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, সুখ-দু:খের খবর নেওয়া, ভোট চাওয়ায় বার্তা আদানপ্রদান করছেন। মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েও ভোট চাচ্ছেন অনেকে।
উৎসাহ-উদ্দীপনায়, উৎসবের আমেজে জমে ওঠেছে নির্বাচন। প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি লেখা রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলছে জাতীয় প্রেসক্লাব ভবনসহ এর আশপাশ এলাকায়। দৃষ্টিনন্দন ব্যানারে কোথাও কোথাও ঢাকা পড়েছে আকাশ। প্রচারণায় কোনো পরিষদই পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। চলছে অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিযোগিতা। সামাজিক মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীদের জন্য ভোট চেয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী, সহযোদ্ধারা।
সব প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি সাংবাদিকদের কল্যাণে, সাংবাদিকদের জন্যে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতারত তিনটি পরিষদের প্রতিশ্রুতি প্রায় কাছাকাছি। যেমন- গণমাধ্যমকর্মী আইন সংশোধনসহ জাতীয় সংসদে পাস করানো; বেসরকারি টেলিভিশন, বেতার ও অনলাইন সংবাদ পোর্টালে কর্মরতদের জন্য রোয়েদাদ বোর্ড; অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনায় নীতিমালা প্রণয়ন; বেতন কাঠামো নির্ধারণ ও সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি।
‘গুরুতর অসুস্থ সাংবাদিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যবস্থা, আবাসন নিশ্চিতে ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমুখি সমবায় সমিতির পরিকল্পনা ও প্রকল্প এগিয়ে নিতে সহযোগিতা, কম খরচে ডিইউজের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা ও গ্রুপ বিমা চালুর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও আছে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে।
ডিইউজের বর্তমান সভাপতি, ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি কুদ্দুস আফ্রাদ এবারো সভাপতি পদে প্রার্থী। তাঁর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী বার্তা২৪ডটকমের গাজী জহিরুল ইসলাম। ২১ জনের প্যানেল হলেও এতে আছেন ১৯ প্রার্থী, তাঁদের মধ্যে নারী সাংবাদিক পাঁচজন।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, যমুনা টিভিতে কর্মরত সাজ্জাদ আলম খান তপু এবার লড়ছেন সভাপতি পদে। তাঁর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আরটিভির বার্তা সম্পাদক আকতার হোসেন। তাঁদের প্যানেল থেকে তিনজন নারী সাংবাদিক প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন নির্ধারণের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এ পরিষদ। ডিইউজের কার্যালয়ে মিডিয়া কেন্দ্র চালুর কথাও বলছে।
‘অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন লড়াইয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, শুধু আশ্বাস নয়, বাস্তবায়নই আমাদের অঙ্গীকার’ শ্লোগান সোহেল-মেহেদী পরিষদের। এ পরিষদের সভাপতি প্রার্থী সোহেল হায়দার চৌধুরী দৈনিক যায়যায়দিনে কর্মরত। তিনি ডিইউজের দুইবার সাংগঠনিক সম্পাদক, দুইবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী মেহেদী হাসান গাজী টিভিতে কর্মরত। এ পরিষদ থেকে দুজন নারী সাংবাদিক প্রার্থী আছেন। প্রবীণ-নবীনের মেলবন্ধনে আগামীর পথ চলার কথা বলছে এ পরিষদ।
যোগাযোগ করলে কুদ্দুস আফ্রাদ মত ও পথকে বলেন, ‘দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেলে সাংবাদিক ইউনিয়নকে আরো শৃঙ্খলাবদ্ধ করে এর সুনাম, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকর করা হয়েছে। যা মালিকরা মানছেন না। আমরাও এটা মেনে নিতে পারছি না। জয়ী হলে আমরা সংশোধনসহ নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবো। গত মেয়াদে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, সেটা বড় কথা নয়। সাংবাদিকদের দাবি আদায়ে, তাদের সমস্যার সমাধানে যে কোনো পদক্ষেপে আমি সামিল থাকব। ডিইউজে কোনো ক্লাব নয়। এটা সাংবাদিকদের অধিকার, মর্যাদা রক্ষার ইউনিয়ন। আমার সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। বিজয় হলেও, না হলেও।’
সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইনের সংশোধন করা খুব জরুরি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি, এ আইনে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার থাকবে না। গ্র্যাচুইটি সুবিধা কমে আসবে। এসব বিষয়ে আন্দোলন সংগ্রাম জরুরি। গণমাধ্যমকর্মী আইনকে সংবাদিকবান্ধব করতে চাই।’
সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকদের অধিকার, মর্যাদার প্রশ্নে কখনো আপোস করিনি। আপোস করবো না।
গণমাধ্যমকর্মী আইন সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো। অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের নীতিমালা প্রণয়ন, বেতন কাঠামো তৈরি ও সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেবো। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী।’
আগামী ২৯ মার্চ ভোট হওয়ার জন্য নির্ধারিত। দিন গড়ানোর সঙ্গে প্রার্থীদের ব্যস্ততা বাড়ছে। ভোটদাতাদের হিসাব-নিকাশও থেমে নেই, এগিয়ে চলছে। এবার ২১টি পদে লড়ছেন ৭১ প্রার্থী। তিনটি পরিষদের দুটিতে ৪২ জন, আরেকটিতে আছেন ১৯ প্রার্থী। পরিষদের বাইরে প্রার্থী আছেন ১০ জন। ডিইউজের এ অংশের মোট ভোটদাতা দুই হাজার ৯৬৮ জন। প্রতি দুই বছর পরপর এ নির্বাচনের আয়োজন হয়। প্রসঙ্গত, ডিইউজের এ অংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।