নৌ-দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

লঞ্চডুবি, লাশ উদ্ধার
লঞ্চডুবিতে লাশ উদ্ধার। ফাইল ছবি

দেশে সর্বশেষ গত রোববার (২০) মার্চ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে রূপসী-৯ নামের কার্গো জাহাজের ধাক্কায় নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আশ্রাফ উদ্দিন ডুবে গেলে লঞ্চটির অন্তত ১০ যাত্রী মারা যান। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কমপক্ষে ৫ জন।

ইতোমধ্যে রূপসী-৯ কার্গো জাহাজ ও এর চালকদের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভিডিও দৃশ্যে এ লঞ্চডুবির যে চিত্র দেখা গেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এ লঞ্চডুবির ঘটনাকে রীতিমতো হত্যাকাণ্ড আখ্যায়িত করা যায়। যেভাবে এসব মানুষকে মারা হলো, সেই ঘটনায় হত্যা মামলা করে তাদের সাজা দেওয়া সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।

universel cardiac hospital

নৌ-দুর্ঘটনায় প্রতি বছরই অনেক মানুষ আহত, নিহত ও নিখোঁজ হচ্ছেন। এ দেশে বড় ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন হৈচৈ হয়, গণমাধ্যমগুলোও এ নিয়ে কিছুদিন সরগরম থাকে। নৌ-দুর্ঘটনার ঘটনাসহ হতাহতের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিও দুর্ঘটনা রোধে একগুচ্ছ সুপারিশ করে। এরপর রহস্যজনক কারণে বিষয়টি আর সামনের দিকে ঠিক ওইভাবে এগোয় না। অনেক সময় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা আটক বা গ্রেফতার হলেও শেষ পর্যন্ত টাকার জোরে বা প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে অথবা নানা কৌশলে ছাড় পেয়ে যায়, যা দুঃখজনক।

এক গবেষণা প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, চালকদের অশুভ প্রতিযোগিতা, নৌপথে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর না করা, নৌযান চালকদের দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা, অদক্ষতা, ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করার ‘সুযোগ’ পাওয়াসহ বিভিন্ন নৌযানে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করাই হচ্ছে এসব নৌ-দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশের নৌপথে লঞ্চ দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিতভাবে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচারসহ নদীবন্দর-টার্মিনালে মেগাফোনের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালানো জরুরি। পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রীবহন রোধ করা, স্পিডবোটে বা লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামাদিসহ সার্ভে সনদ অনুযায়ী মাস্টার ও ড্রাইভার যথাযথভাবে আছে কিনা তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চলাচলকারী নৌযানে কর্মরত মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানি ও আনসারদের জন্য নিয়মিতভাবে নদীবন্দরগুলোতে নৌ-নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কর্মশালার আয়োজন করাও প্রয়োজন। দরকার দেশের বিভিন্ন নৌপথে নিরাপদে চলাচলের স্বার্থে পর্যাপ্ত পরিমাণে আধুনিক নৌ-সহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপন। পাশাপাশি নৌপথে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক সৎ, মেধাবী ও দক্ষ নৌ-পুলিশ। এসবের পাশাপাশি কোথাও কোনো নৌযানডুবির ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধারাভিযানের লক্ষ্যে প্রয়োজন আধুনিক জাহাজ, উদ্ধারকারী স্পিডবোট, হেলিকপ্টার।

এসব পদক্ষেপ ছাড়া দেশের বিশাল নৌপথে শৃঙ্খলা বজায় রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেইসঙ্গে সঠিক নকশা অনুযায়ী লঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে কি-না, নৌযান বা লঞ্চের ফিটনেস ঠিক আছে কিনা নিয়মিতভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তদারকি করাও আবশ্যক। সর্বোপরি যাত্রীদেরও সতর্ক হতে হবে, তাদের জীবনের মূল্য বুঝতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় উপরোক্ত বিষয়গুলো সুনিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশে নৌ-দুর্ঘটনা নিশ্চয়ই অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করি।

শেয়ার করুন