প্রাথমিক শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে বছরে ৯০০ কোটি টাকা অপচয়

হাসান শান্তনু

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন ফিন্যান্সিং গ্লোবাল এডুকেশন অপরচুনিটি’র (দ্য এডুকেশন কমিশন) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের গড়ে শতকরা ১৬ ভাগ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। এতে প্রতি বছর গড়ে ২০ শতাংশ শিক্ষাঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয় হয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাবদ। অথচ শিক্ষক অনুপস্থিতি ঠেকানো যাচ্ছে না নজরদারির অভাবে।’

শিক্ষাখাতে সুষ্ঠু বিনিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে কাজ করে ‘দ্য এডুকেশন কমিশন’। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ১৭টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতের ওপর গবেষণা করে ‘দ্য লার্নিং জেনারেশন: ইনভেস্টিং ইন এডুকেশন ফর অ্যা চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদন সংস্থাটি প্রকাশ করে।

universel cardiac hospital

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে না আসার অন্যতম কারণ জবাবদিহির অভাব। এই অনুপস্থিত থাকাটা নতুন কিছু নয়। সমস্যাটা দীর্ঘদিনের।’ একে উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন দাবি করেন, ‘শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকার জরিপটি সত্য নয়। কোনো শিক্ষক ডেপুটেশনে থাকলে তাঁকে অনুপস্থিত হিসেবে দেখানো যায় না।’

করোনা মহামারিতে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে খুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। খোলার প্রথম দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই উপস্থিত হননি। তারা করোনার আগে থেকেই নানা কৌশলে শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন। বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। গত ১০ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তরের আদেশটি প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে চিকিৎসার জন্য, বা দেশের বাইরে ছুটিতে গেছেন, কিংবা অন্য ছুটি নিয়ে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছুটির অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করছেন। তাদের বিষয়ে যেসব জেলা থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি, তাদেরকে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত ছকে শিক্ষকের নাম ও পদবি, বিদ্যালয়ের ঠিকানা, অনুপস্থিতির তারিখ, অনুপস্থিতির কারণ এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আদেশে তা উল্লেখ করতে বলা হয়।

এবার দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০ রমজান পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

শেয়ার করুন