আওয়ামী লীগ নেতা টিপু, কলেজ ছাত্রী হত্যায় একজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার ঘটনায় একজন শুটারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে আজ রোববার (২৭ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটক ওই তরুণ মূলত ভাড়াটে খুনি। মতিঝিল এলাকার বেশ কয়েক রাজনৈতিক নেতার ঘনিষ্ঠ এই তরুণসহ অন্তত পাঁচ থেকে সাতজন এই হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব শুরু হলে তাদের টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানতে পেরেছেন, তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিকের ঘনিষ্ঠ এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য। এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের ব্যবহার করা হয়। মতিঝিল এলাকায় তাদের মতো অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী রয়েছে। এর আগে তাদের হাতে আরো অনেকে খুন হন।

ঘটনাস্থল থেকে জব্দ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বুকের সামনে ব্যাগ আর হেলমেট পরা এক যুবক মোটরসাইকেল থেকে নেমেই মাইক্রোবাসের সামনের সিটে বসা টিপুর গাড়িতে গুলি চালান। গুলিতে গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। টিপুকে লক্ষ্য করে দ্রুত গুলি চালিয়ে সড়কের অন্য পাশ দিয়ে পালিয়ে যান ওই যুবক। তখন সড়কে টিপুর গাড়ির বিপরীত পাশের মার্কেট বন্ধ ছিল। রাস্তাও ছিল ফাঁকা। ফলে গুলির পরপরই দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন খুনি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জাহিদুল ইসলাম টিপু ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যও ছিলেন। মতিঝিল কাঁচা বাজার এলাকায় গ্র্যান্ড সুলতান নামে তার একটি রেস্টুরেন্ট আছে। তিনি রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। ৪-৫ দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দেয়।

প্রতিদিনের মতো গত বৃহস্পতিবার গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না মাইক্রোবাস নিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান নামে একটি রেস্টুরেন্ট কাজ শেষে বাসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে রাত আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে মানামা ভবনস্থ বাটার দোকানের সামনে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে টিপুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে যায়। তার গলার ডানপাশে, বুকের বামপাশে, বুকের বামপাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বামকাঁধের ওপর, পিঠের বামপাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বামপাশে কোমর বরাবর, পিঠের ডানপাশের কোমরের ওপর একাধিক স্থানে মারাত্মক জখম হয়।

দুষ্কৃতিকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করার সময় প্রীতি নামে এক পথচারী নিহত হয়। আহত হয় টিপুর চালক মনির হোসেন মুন্না।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শোরুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি নামের এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। তবে ওই কলেজছাত্রী সন্ত্রাসীদের গুলিতে, নাকি অন্য কারো গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন।

শেয়ার করুন