‘আমেরিকার মন্ত্রীর ধমকে ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট’

নিজস্ব প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যতই ঘুরপাক খান, ডিগবাজি খান, লাভ নেই। সময় শেষ হয়ে এসেছে। আমেরিকার এক মন্ত্রীর ধমকে জাতিসংঘে ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ‘মুক্তিযুদ্ধের সূচনা সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

১৯৭১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা উপলক্ষে চট্টগ্রামে এই সমাবেশ হয়। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশটি প্রথমে চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের সামনে হওয়ার কথা ছিল। তবে একই স্থানে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয়। ফলে সেখানে কাউকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। পরে পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করে বিএনপি।

সমাবেশে দেশ, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য ‘নতুন মুক্তিযুদ্ধের’ ডাক দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে সরাতে হবে। এই সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। সবাই মিলে এই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা লজ্জার। কিন্তু এর জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগের বেআইনি নির্দেশে খুন ও গুমের ঘটনা ঘটেছে।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান কাটাছেঁড়া করে নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে। জনগণ আবার নতুন করে সংবিধান রচনা করবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সুচতুরভাবে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।

আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃতি করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ইতিহাস বিকৃতি করেছে। তারা জিয়ার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু চাইলেও এই নাম মুছে ফেলতে পারবে না।

সমাবেশের আগে দুপুরে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে পুলিশি বাধার সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের করের টাকায় চাকরি করেন। সারা জীবন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে না। সাবধান হয়ে যান। অশালীন, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও শিষ্টাচারবর্জিত কথা বলবেন না। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এরপর জনগণের নিষেধাজ্ঞা আসবে। জনগণই বেআইনি ঘোষণা করবে। খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করলে জনগণ ক্ষমা করবে না।

এদিকে সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মেজর জিয়ার ঘোষণায় স্বাধীনতার সূচনা হয়েছে। আজ যখন ইতিহাসের সত্য কথা বলতে যাই, তখন আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ওঠে। কারণ, যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছিল, আওয়ামী লীগের নেতারা ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেখানে একজন মেজর জিয়া সফল হয়েছিলেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার দ্রব্যমূল্য কমাতে পারে না। কারণ, তারা নিজেরাই লুটপাটে ব্যস্ত। দেশের মূল সংকট আজ গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকারের পতনের আন্দোলনের সূচনা হবে এই চট্টগ্রাম থেকে। এই সরকার বাংলাদেশের আত্মাকে বেঁচে দিয়েছে। বাংলাদেশের আত্মাকে ফেরত আনতে হবে।

আগামী বছর থেকে প্রতিবছর ২৭ মার্চ পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশে চট্টগ্রাম ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

শেয়ার করুন