জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ছয় বছরে (২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশের অন্তত ২৪ লাখ মানুষ আহত ও অসুস্থ হয়েছেন। তাদের চিকিৎসায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ব্যয় হয়েছে ৩৯৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড . শামসুল আলম, দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।
পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান শক্তিশালীকরণ (ইসিডিএস) প্রকল্পের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম প্রকাশনা অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
দুর্যোগে আক্রান্ত (অসুস্থ, আহত প্রভৃতি) খানার সদস্যদের চিকিৎসা ব্যয়: গত ছয় বছরে (২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত) অসুস্থ ও আহত প্রভৃতিতে খানার (পরিবার) ২৪ লক্ষ ১২ হাজার ৩৮৯ জন সদস্যের চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৯৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। যেখানে মাথাপিছু গড় চিকিৎসা ব্যয় ১৬ হাজার ৩৪১ টাকা; এর মধ্যে ১৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৯৮ জন শিশুর মাথাপিছু গড় চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮২১ টাকা।
দুর্যোগে আক্রান্ত খানার (পরিবার) আর্থিক সহায়তা: প্রাকৃতিক দুর্যোগে উল্লিখিত ছয় বছরে আক্রান্ত ৭৪ দশমিক ০২ শতাংশ খানায় সরকার, ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ খানায় এনজিও/আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ খানায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ খানায় অন্যান্য উৎস (আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব প্রভৃতি) থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুর্যোগে শিশুর অসুস্থতা : ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল এ ছয় বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে শূণ্য থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪৭৪ জন শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার কারণে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫০ দশমিক ০২ শতাংশ শিশু অসুস্থ হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিশু জলমগ্নতায় এবং প্রচণ্ড খরাজনিত কারণে ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ শিশুর অসুস্থ হওয়ার চিত্র জরিপে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
পানযোগ্য পানির অপর্যাপ্ততার কারণে রোগ : প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছয় বছরে (২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত) পানির অপর্যাপ্ততার কারণে ৪৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ডায়রিয়া, ২০ দশমিক ২২ শতাংশ আমাশয়, ঠান্ডা/সর্দি-কাশিতে ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, চর্মরোগে ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, জ্বরে ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, ১১ দশমিক ১০ শতাংশ জন্ডিসে এবং ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে।
খানার (পরিবারের) চিকিৎসা সুবিধা : উল্লিখিত ছয় বছরে খানার সদস্যদের ৪০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ওষুধের দোকান, ৪৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ জেলা/উপজেলা/ইউনিয়নের সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক এবং ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা সুবিধা নিয়েছে। এছাড়া ১৫ দশমিক ০৬ শতাংশ রোগী কমিউনিটি ক্লিনিক, ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এমবিবিএস ডাক্তার, ৫ দশমিক ১০ শতাংশ কবিরাজ/বৈদ্য, ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ঘরোয়া চিকিৎসা/নিজস্ব চিকিৎসা, ২ দশমিক ২০ শতাংশ খানার সদস্য অন্যান্য জায়গা থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে। পাশাপাশি শূণ্য দশমিক ২৬ শতাংশ খানার সদস্য কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবাই নেয়নি বলেও জরিপ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।