দাম কমলেও বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

সয়াবিন তেল
ফাইল ছবি

বাজারে হঠাৎ করেই সরবরাহ কমে গেছে ভোজ্য তেলের। কোনো কোনো কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বেশ কম। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ নেই। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। রাজধানীর কাওরান বাজার ও নিউ মার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহের এ অবস্থা জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের বড় কয়েকটি ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি মার্চে বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে তেল বিক্রি করছে। টিসিবি তাদের কাছ থেকে তেল কিনে সাশ্রয়ী মূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষকে দিচ্ছে। বাজারে প্রতিষ্ঠাগুলোর তেলের সরবরাহ কমার পেছনে এটার একটা কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

universel cardiac hospital

এদিকে বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আবারও ব্যাখ্যা চেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—টি কে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপ।

বাজারে তেলের সরবরাহ কম প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, কয়েক দিন পরে গতকাল বাজারে রূপচাঁদা ব্রান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল এসেছে। তীরের এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কম।

তিনি বলেন, তেলের দাম কমার পর এখন বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব তেল সরবরাহ করছে তাদের গায়েও আগের চেয়ে কম দাম লেখা।

এই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী হাজী স্টোরের মো. কামাল গাজী বলেন, বসুন্ধরার বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কম। অবশ্য হুহু করে যেমন তেলের দাম বেড়েছিল এখন আর সেটা হচ্ছে না। আগের চেয়ে লিটারে সাত-আট টাকা কমে গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৭৪০ থেকে ৭৫০ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩১৫ থেকে ৩২০ টাকা ও এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা তালেব হোসেন বলেন, তেলের দাম কমেছে ঠিক আছে কিন্তু যদি চাহিদামতো তেল পাওয়া না যায় তাহলে দাম কমে কী লাভ হলো? তিনি বলেন, আমি একটি প্রতিষ্ঠানের দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন না পেয়ে পাঁচ লিটারের বোতল কিনেছি। এতে আমার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মূলত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে টি কে গ্রুপের কারখানায় পাওয়া অনিয়ম সম্পর্কে ভোক্তা অধিদপ্তরের দেওয়া চিঠি থেকে জানা যায়, কোম্পানিটি গত ফেব্রুয়ারিতে ২৭ হাজার ৩৭১ টন পাম তেল বিপণন করলেও মার্চে বিপণন করেছে মাত্র ২১ হাজার ১১৯ টন।

সরবরাহ কমিয়েছে রূপচাঁদা ও বসুন্ধরাও। ফেব্রুয়ারিতে রূপচাঁদা ১৪ হাজার ৩৮ টন তেল সরবরাহ করলে মার্চে তা ৮ হাজার ২৬৩ টনে নেমে আসে। আর বসুন্ধরা ফেব্রুয়ারিতে তাদের কেরানীগঞ্জের কারখানা থেকে ১৭ হাজার টন তেল সরবরাহ করলেও মার্চে ১৩ হাজার ৫২ টন তেল সরবরাহ করেছে। এছাড়া পুষ্টি ব্রান্ডের টি কে গ্রুপকেও বেশ কিছু অনিয়মের জন্য চিঠি দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তেলের সরবরাহ কমার বিষয়ে আমাদের জানিয়েছে, তাদের ক্রুড অয়েল ছিল না। কিন্তু তাদের এ ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট হতে না পেরে আগামী বুধবার অধিকতর শুনানির জন্য আবার ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো কিছু অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা পরিদর্শন করছি। কোনো অনিয়ম পেলে সংশোধনের জন্য বলছি। আশা করছি, সামনে রমজানে বাজার স্বাভাবিক থাকবে।

শেয়ার করুন