রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি করা গ্যাসের মূল্য রুশ মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুমকি দিয়েছেন, শুক্রবার (১ এপ্রিল) থেকে রুশ গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ না করলে চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) পাল্টাপাল্টি এই অবস্থানের কারণে ইউরোপে জ্বালানি গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ ও তেলের চাহিদার ৩০ শতাংশ রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি করে। সরবরাহ যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে সহজে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানির ঘাটতি মোকাবিলার সহজ কোনও পথ তাদের সামনে নেই।
ইউক্রেনে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে রাশিয়া। ডলার ও ইউরোতে লেনদেন কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া দাবি করেছে, ‘বন্ধু সুলভ নয়’ এমন দেশগুলোকে ইউরো নয়, অবশ্যই রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন বলেছেন, বন্ধুসুলভ নয় এমন দেশগুলোকে রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা গ্যাসের মূল্য রুশ মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করতে হবে। শুক্রবার (১ এপ্রিল) থেকে ইউরো বা ডলারের বদলে রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ না করলে সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করবে রাশিয়া।
টেলিভিশনে ভাষণ প্রচার হওয়ার আগে পুতিন একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই ডিক্রিতে শুক্রবার থেকে বিদেশি ক্রেতাদের রুশ গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।
পুতিন বলেন, রাশিয়ার গ্যাস কিনতে হলে রুশ ব্যাংকে রুবলে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ১ এপ্রিল থেকে এই অ্যাকাউন্টগুলো থেকেই গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদি এভাবে মূল্য পরিশোধ করা না হয় তাহলে ক্রেতারা তাদের বাধ্যবাধকতা মানছে বলে আমরা বিবেচনা করব।
তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি রুবলে মূল্য পরিশোধ করা না হয় তাহলে চুক্তি স্থগিত করা হতে পারে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, কেউ কোনও কিছু আমাদের বিনামূল্যে দেয় না। আমরাও বিনামূল্যে কিছু দিতে যাব না। এমনটি না হলে চলমান চুক্তি স্থগিত করা হবে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে রাশিয়ার ‘মুক্তি ও স্বাধীনতা’র মূল্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালি জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে রুশ গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
তবে রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধের রুশ দাবি মানতে ইউরোপীয় দেশগুলো নারাজ। বৃহস্পতিবার জার্মানি ও ফ্রান্স মস্কোর এই দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা এটিকে অগ্রহণযোগ্য চুক্তির বরখেলাপ এবং ব্ল্যাকমেইল হিসেবে উল্লেখ করেছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, চুক্তি অনুসারে ডলার ও ইউরোতে গ্যাস পরিশোধের বিষয়ে পুতিনকে শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। তিনি বলেন, গ্যাস সরবরাহ চুক্তি অনুসারে বেশিরভাগ সময় মূল্য ইউরোতে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ডলারেও পরিশোধ করা যাবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় আমি জানিয়েছি, এই ব্যবস্থাতেই আমরা থাকতে চাই।
এক সংবাদ সম্মেলনে জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক জানান, পুতিনের জারি করা ডিক্রি এখনও তিনি দেখতে পাননি। রুশ গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হওয়াসহ সবকিছুর জন্য জার্মানি প্রস্তুত রয়েছে। কাল হয়ত এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে যেখানে আমাদের কাছে কোনও রুশ গ্যাস নেই।
- আরও পড়ুন >> ‘শারীরিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন শিশুরা বোঝা নয়’
ফরাসি অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লি মায়রি বলেছেন, রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ফ্রান্স ও জার্মানি। গ্যাসের মূল্য পরিশোধকে হাতিয়ার বানিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের বিভক্ত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার কাছে ব্ল্যাকমেইলে শিকার হবে না বলে পশ্চিমারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
গত সপ্তাহে ইতালি সরকারের এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, ইতালি জ্বালানির মূল্য ইউরোতে পরিশোধ অব্যাহত রাখবে।
পোল্যান্ডও বলেছে, তারা রুবলে পরিশোধ করতে পারবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ রাশিয়ার মুদ্রাকে ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করবে। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরুর পর রুবলের উল্লেখযোগ্য দরপতন হয়েছে।
গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে ধরে নিয়ে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া ইতোমধ্যে জরুরি পরিকল্পনা চালু করেছে। পরিকল্পনা অনুসারে, দেশ দুটি আগাম সর্তকতামূলক ধাপে রয়েছে। পরিকল্পনার প্রথম তিনটি ধাপে সম্ভাব্য সরবরাহ ঘাটতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়। চূড়ান্ত ধাপে গ্যাসকে রেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।
চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি করায় যুক্তরাজ্যে হয়ত প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ইউরোপে চাহিদা বাড়ার ফলে বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশটি প্রভাবিত হতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, বিবিসি।