দেশে বড় বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে হবে, তা না হলে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
আজ শনিবার দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি এই আশঙ্কার কথা বলেন।
তিনি বলেন, শ্রীলংকা ও আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই মেগা প্রকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। মেগা প্রকল্পগুলোতে যে অর্থ বিনিয়োগ করছি, তা যদি সময় মতো ফেরত না আসে, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতু আমাদের দরকার আছে। যদিও এখানে ব্যয় বেড়েছে অনেক। কিন্তু ওই রুটে পদ্মা রেলসেতুর খুব একটা প্রয়োজন নেই। কারণ পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে ওই এলাকা থেকে সহজেই পণ্য ঢাকায় আসবে, এর সঙ্গে আবার নৌপথ রয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইন হচ্ছে, তা দরকার আছে। এই পথে আরও বিনিয়োগ দরকার। কারণ এটা আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। কিন্তু আমাদের বিশাল টাকা খরচ করে মিয়ানমার পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কোনো দরকার নেই। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের এমন কোনো বাণিজ্য হবে না যা দিয়ে এই বিনিয়োগ ফেরত আসতে পারে।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে আমাদের এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমরা ২.৫ বিলিয়ন ডলারের জায়গায় ১৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি। এই প্রকল্প হয়তো আমাদের দীর্ঘমেয়াদে কাজে আসবে। আমাদের এখন টাকা দরকার। আমাদের সবগুলো হাইওয়ে যদি চার লেন করা হতো, সড়কগুলো যদি আরও চওড়া করা হতো, তাহলে লভ্যাংশ অনেকগুণ বেশি পাওয়া যেতো। অর্থনীতিতে আরও গতি আসতো।
তিনি বলেন, সামনের মেগা প্রকল্প নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে। বাংলাদেশে এখনও ভাল অবস্থায় আছে। এই ভালো অবস্থাতে থাকার সময়ই ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে।
রেমিট্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি আমদানি হচ্ছে। আবার রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বাড়ছে। এটি চলতে থাকলে বছর শেষে এই ঘাটতি ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। কিন্তু ইতিহাসে কখনওই আমাদের এই ঘাটতি আট থেকে নয় বিলিয়নের বেশি হয়নি। এ বিষয়ে এখনই সচেতন হতে হবে।
দেশে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে জানিয়ে মনসুর বলেন, ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সংযত হতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে সচিবদের জন্য বডিগার্ড নেই, যা আমাদের আছে। দেশের বড় কর্মকর্তাদের চকচকে নতুন গাড়ি দিতে হয়। দেশে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করার প্রবণতা বেশি। কিন্তু যে হারে ব্যয় হচ্ছে, সে রকম সামর্থ্য আমাদের নেই।
ব্যাংক খাত নিয়ে মনসুর জানান, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ডিপোজিট কমছে। এতে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও কমবে। ব্যাংক খাতে মুনাফাও কমছে। এক সময় ব্যাংক খাতের রিটার্ন অব অ্যাসেট ছিল ১ দশমিক ৮২ শতাংশ যা এখন শুন্য দশমিক ৬ শতাংশ। রিটার্ন অব ইকুইটি যেখানে ছিল ২৪ শতাংশ, তা এখন নেমে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশে।
দেশের কর ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন রিটার্ন দাখিল থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিস ম্যানুয়ালি ডিজিটাল হয়েছে। আমাকে কেন কর অফিসে যেতে হবে। কর্মকর্তা কেন আমাকে চিনতে হবে। করদাতার পরিচয় হবে নাম্বারের মাধ্যমে। এজন্য দেশের কর কর্তৃপক্ষ ও করনীতির কর্তৃপক্ষ আলাদা হতে হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আইসিএবি কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় ব্যবসায়ীরা আগামী বাজেটকে সামনে রেখে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন।