একটা সময় মনে হয়েছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লিডও নিতে পারে বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসান জয় যেভাবে সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন, তাতে আশা জাগানো অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ৩০০ রানও করতে পারলো না। প্রথম ইনিংসে ২৯৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে। ফলে প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রান করা প্রোটিয়ারা পেয়েছে ৬৯ রানের লিড।
আজ (শনিবার) ডারবান টেস্টের তৃতীয় দিনে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দুই সেশনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দুর্দান্ত হলেও চা বিরতির পরপরই শেষ হয়ে যায় ইনিংস। চা বিরতির পর ৯ ওভারেই শেষ ৩ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
ওপেনিংয়ে নেমে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন জয়। খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ১৩৭ রানের ইনিংস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি পূরণ করে বলতে গেলে একা হাতে লড়ে গেছেন তিনি। লিজাড উইলিয়ামসের শিকার হওয়ার আগে ৩২৬ বলের ইনিংসটি সাজান ১৫ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়। ৪৪২ মিনিট ক্রিজে ছিলেন ২১ বছর বয়সী এই ওপেনার।
লোয়ার অর্ডারে তিনি সঙ্গ পেয়েছেন লিটন দাস (৪১), মেহেদী হাসান মিরাজ (২৯) ও ইয়াসির আলীর (২২) কাছ থেকে।
সিমন হারমার ১০৩ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট। লিজাড উইলিয়ামস ৫৪ রান খরচায় নিয়েছেন ৩ উইকেট। আর একটি করে উইকেট শিকার ডুয়ান ওলিভিয়ের ও উইয়ান মুল্ডারের।
জয়ের সৌজন্যে আরেকটি ভালো সেশন
টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, তাও আবার দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনে! সবচেয়ে বড় কথা যে পরিস্থিতিতে ব্যাট করে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছেন, এককথায় অসাধারণ। মাত্র ২১ বছর বয়সে মাহমুদুল হাসান জয় দেখালেন তার পরিপক্কতা। তার সৌজন্যে তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনটাও ভালো কেটেছে বাংলাদেশের।
যদিও দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন লিটন দাস। তাতে খানিক ধাক্কা লাগলেও ইয়াসির আলীর সঙ্গ পেয়েছিলেন জয়। পরে ইয়াসিরও আউট হয়েছেন। এই ২ উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ২৮ ওভারে বাংলাদেশ স্কোরে জমা করে ৭৪ রান। চা বিরতির সময় জয় অপরাজিত ছিলেন ১০৬ রানে, আর মেহেদী হাসান মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ২৪ রানে।
জয়ের অসাধারণ সেঞ্চুরি
টপ অর্ডার কিংবা স্বীকৃতি ব্যাটাররা যখন মুখ থুবড়ে পড়লেন। দলের অবস্থা যখন করুণ। ঠিক তখনই ধারার বিপরীতে গিয়ে মাহমুদুল হাসান জয় দেখালেন টেস্টে ব্যাট করতে হয় কীভাবে! প্রচণ্ড ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে, ঠাণ্ডা মাথায় সময়ের দাবি মিটিয়ে চমৎকার ব্যাটিংয়ের পেলেন পুরস্কার। দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনেই জয় টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন মাত্র তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় একা হাতে লড়ে গেছেন জয়। দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে অভিজ্ঞ ব্যাটাররা ফিরে গেলেও জয় একপ্রান্ত আগলে রেখে পথ দেখাচ্ছিলেন বাংলাদেশকে। আর আজ তৃতীয় দিনে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি বুঝে সিঙ্গেলস যেমন নিয়েছেন, তেমনি বাজে বলকে করেছেন বাউন্ডারি ছাড়া। সত্যিকার টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে ২৬৯ বলে পূরণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে এই ওপেনার মেরেছেন ১০ বাউন্ডারির সঙ্গে এক ছক্কা।
রান আউটে কাটা পড়লেন ইয়াসির
টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিটি উইকেট অমূল্য। আর সেই উইকেট যদি হেলায় হারানো যায়, তাহলে এর চেয়ে বেশি কষ্টের আর হতে পারে না। বিশেষ করে, উইকেট পড়ে যখন রান আউট হয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে আসলে রান আউট মেনেই নেওয়া যায় না! ইয়াসির আলী সেই কাজটিই করলেন। রান আউটে কাটা পড়েছেন তিনি। ২২ রানে আউট হয়েছেন এই ব্যাটার।
লাঞ্চ থেকে ফিরেই লিটন আউট
লাঞ্চের আগের সময়টা দারুণ খেলছিলেন লিটন দাস। কিন্তু প্রথম সেশনের বিরতির পর মাঠে ফিরতেই খেই হারালেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। লাঞ্চ থেকে ফিরে দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে গেছেন তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন লিটন। লাল বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করা এই ব্যাটার ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসে জ্বলে উঠেছিলেন। চাপের মধ্যে ক্রিজে এসে চমৎকার ব্যাটিংয়ে হাঁটছিলেন হাফসেঞ্চুরির দিকে। তবে মাইলফলকটি ছোঁয়া হয়নি। মধ্যাহ্নভোজের বিরতি থেকে ফিরেই বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় তার।
লিজাড উইলিয়ামসের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন লিটন। ফলে ৪১ রানে থামেন এই উইকেটকিপার। ৯২ বলের ইনিংসটি লিটন সাজান ৬ বাউন্ডারিতে। ফেরার আগে মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে গড়ে যান ৮২ রানের জুটি।
লাঞ্চের আগের সময়টা বাংলাদেশের
ডারবান টেস্টের তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটা দারুণ কাটলো বাংলাদেশের। শুধুমাত্র তাসকিন আহমেদের উইকেটটি ছাড়া সবকিছুই ছিল সফরকারীদের। মাহমুদুল হাসান জয় ও লিটন দাসের চমৎকার ব্যাটিংয়ে লাঞ্চের আগের সময়টা নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে আউট হয়ে গেলেন মুশফিকুর রহিম। ওই অবস্থায় বিশেষজ্ঞ ব্যাটারকে না পাঠিয়ে নামানো হয়েছিল নাইটওয়াচম্যান তাসকিন আহমেদকে। মাহমুদুল হাসান জয়কে সঙ্গে করে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। যদিও বেশিদূর যেতে পারেননি তাসকিন।
দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের হারানো ৪ উইকেটের সবক’টি নিয়েছিলেন সিমন হারমার। তবে তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের হারানো প্রথম উইকেটটি এই স্পিনারের নয়। লিজাড উইলিয়ামসের শিকার হয়েছেন তাসকিন। এই পেসারের বলে উইয়ান মুল্ডারের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। ফেরার আগে তাসকিন ১০ বলে করেন ১ রান।
তাসকিন দ্রুত ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেছেন জয় ও লিটন দাস। তাদের ব্যাটে এগিয়ে চলেছে সফরকারীরা। জয় তুলে নিয়েছেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। ১৭০ বলে ফিফটি পূরণ করেন এই ওপেনার। এখন হাঁটছেন সেঞ্চুরির পথে। লাঞ্চ বিরতির আগে জয় অপরাজিত ৮০ রানে। তাকে সঙ্গ দিয়ে যাওয়া লিটন ছিলেন ৪১ রানে অপরাজিত। ষষ্ঠ উইকেটে তারা অবিচ্ছিন্ন ছিলেন ৮২ রানে।