ওবায়দুল কাদের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি ব্যর্থ: সংসদে জাপার মহাসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে পরিবহন ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি ব্যর্থ বলে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এ সময় তিনি রাজধানীর সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার কথা তুলে ধরে বাস মালিক সমিতিরও সমালোচনা করেন।

জাতীয় সংসদে ‘পয়েন্ট অব অর্ডারে’ অনির্ধারিত এই আলোচনার পরে জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য ও পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সমালোচনার জবাব দেন। এর আগে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়।

universel cardiac hospital

শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহত হয়েছেন। একজন ছাত্রী স্কুটি নিয়ে যখন ফ্লাইওভারে ওঠেন, তখন একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যান। গত বুধবার কামরুন্নেসা স্কুলের শিক্ষার্থীকে আনতে গিয়ে তার মা পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় ব্রেকহীন বাসের ধাক্কায় মেয়েটির সামনে গাড়ির চাকার নিচে পড়ে মারা যান। এর আগে মঙ্গলবার মিরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান সাবিনা ইয়াসমিন।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়নের দাবিদার। উন্নয়ন অনেক করেছে। কিন্তু রাজধানীর ট্রান্সপোর্টের একটি নীতিমালা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ছে না। ঢাকা শহরে ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। এখানে যেসব বাস চলে, তার বেশিরভাগই পুরনো। লাইসেন্স নেই। কোনো আইন মানে না। রাস্তায় যেখানে সেখানে পার্ক করে রাখে।’

চুন্নু তাঁর পাশের আসনে বসা জাপার আরেক সংসদ সদস্য রাঙ্গাকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমার পাশে বসেছেন বাস ওনার্স মালিক সমিতির সভাপতি। ওনাদেরকে বলবো, আপনারা মানুষের প্রতি দরদী হন। যে সমস্ত গাড়ির ব্রেক নেই, পুরনো ইঞ্জিন, রং নেই- এগুলো সরকারের কেউ দেখে না। আপনারা সরকারের সঙ্গে যোগসাজসে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছেন।’

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী পদ্মা ব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেন, কিন্তু ট্রান্সপোর্টেশনের বিষয়ে টোটালি ফেল। ২৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আটকা পড়ে আছে। ঢাকা শহরে আজকে গাড়ি চলে না। ভালো বাস নেই। ঢাকায় নতুন ৫০০ থেকে ১০০০ বাস নামানোর সক্ষমতা কি সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়? মানুষ নিজের টাকা দিয়ে টিকিট কিনে গাড়িতে যাবে। কিন্তু লাইনের পর লাইন। টিকেট কিনে ওঠার কোনো বাস নেই। এত অপ্রতুল পরিবহন।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী বললেন- আমি নাকি অসত্য কথা বলেছি। অসত্য কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা ব্যবসা করি না। মার্কেটে যাই। এক সপ্তাহ আগে যে বেগুনের দাম ছিলো ৪০ টাকা, পরশুদিন বাজারে গিয়ে দেখি ৭০ টাকা। ৩০ টাকার শসা ১০০ টাকা কেজি। ৩০ টাকা পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকা। চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। ৬৩০ টাকার গরুর গোশত ৬৫০ টাকা। শুধু সয়বিন তেলের দাম কমেছে।’

পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মুজিবুল হক চুন্নুর বক্তব্যের জবাব দেন জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার কলিগ আমার ওপরে ক্ষোভের কারণে বললেন কি-না জানি না। আমি তাঁর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলাম দুই বছর। এটাই তাঁর ক্ষোভের কারণ কি-না।’

জাপার সাবেক এই মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকায় যানজটের কারণে এখন একটি বাস তিনটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। আয় আগের তুলনায় কমে গেছে। বাসের ফিটনেস আছে কি না, সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিআরটিএ দেখে। ফিটনেস না থাকলে জরিমানা করা হয়, বাস ডাম্প করা হয়।‘

মসিউর রহমান বলেন, ‘কোনো গাড়ির বিরুদ্ধধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা তাঁকে বললে তিনি সংসদে বসেই জরুরি ব্যবস্থা নিতে পারতেন।’

শেয়ার করুন